২০০৯ সালে মাত্র পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করার পর পদত্যাগ করেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের পদত্যাগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন।
সোহেল তাজ জানান, ‘যেদিন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলাম, সেদিন কেঁদেছিলাম। আমি উপলব্ধি করেছিলাম যে, আমি একটি বিশাল দায়িত্ব নিচ্ছি। দেশকে পরিবর্তন করার বিষয়ে আমি খুবই উৎসাহী ছিলাম। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।’
দেশ ছাড়ার গুজব, যা বলছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলায় সব দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: মমিনুল হক
শেখ হাসিনা পুলিশ, প্রশাসন আদালতকে ধ্বংস করে গেছে এমন একটা জায়গা নাই যে জায়গা ধ্বংস করে নাই -টুকু
তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করি না। আমি মাঠ পর্যায় থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। অনেক চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে। বিরোধী দলে থাকার সময় জুলুম সহ্য করতে হয়েছে, আন্দোলন-মিছিলে সক্রিয় ছিলাম। আমি কারও পরিচয়ে মন্ত্রী হতে চাইনি। নিজ যোগ্যতার ভিত্তিতেই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলাম বলে মনে করি।’
মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের বিষয়ে সোহেল তাজ বলেন, ‘আমি দুর্নীতি ও অনিয়ম দেখতে পাই। বিডিআর বিদ্রোহের তদন্তকাজে অনিয়ম ছিল, যা আমার পছন্দ হয়নি। আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছিলাম না। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যেখানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের আমার কথা না শুনতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অথচ আমাকে সেই পদেই থাকতে বলা হচ্ছিল। তখন আমি মনে করেছিলাম, আমাকে এবং আমার পরিবারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, ‘আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হচ্ছিল না, তারপরও আমি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাই। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। বারবার তাকে বলেছি আমাকে ছেড়ে দিন। কিন্তু তিনি আমাকে ছাড়তে চাইছিলেন না। তিনি বলেন, “তোমাকে থাকতে হবে, কী চাও? দলের পদ, যুগ্ম সম্পাদক?” আমি থাকতে চাই না।’ বারবার বলেছি,
সবচেয়ে বিস্ময়কর মুহূর্তটি উল্লেখ করে সোহেল তাজ বলেন, ‘ফোনালাপে প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ গান গাওয়া শুরু করলেন, "আমি তোমাকে ছাড়ব না, আমি কাউকে ছাড়ি না"। এতে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তিনি কি আমাকে হুমকি দিলেন, নাকি স্নেহ দেখালেন? অনেকে মনে করেন, এটি স্নেহের বহিঃপ্রকাশ ছিল। এসব কারণেই আমি পদত্যাগ করি।’
পদত্যাগের পর তার জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘পদত্যাগের পর আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হয়েছে। বাংলাদেশে আসলে গোয়েন্দারা আমাকে অনুসরণ করত। এমন সময়ে অনেকে গুম হচ্ছিল। আমার এক ভাগিনাকেও ব্যক্তিগত কারণে গুম করা হয়েছিল। সেই সময়টা ছিল খুবই আতঙ্কজনক।’