চট্টগ্রাম বন্দরের এফ শেড দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন গাড়ির ডাম্পিং স্টেশন। আধুনিক কার শেড প্রস্তুত হওয়ার আগে বিদেশ থেকে আমদানি করা গাড়ির একটি অংশ রাখা হতো সেখানে। দীর্ঘদিন ধরে ছাড় না করায় শতকোটি টাকার ২৯৭টি গাড়ি এখনো পড়ে রয়েছে। বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় অনেকটাই চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে গাড়িগুলো। মূলত মামলা জটিলতায় বন্দরে নষ্ট হচ্ছে এসব গাড়ি। বন্দর ইয়ার্ডের মূল্যবান জায়গা দখল করে এসব গাড়ি পড়ে থাকায় বন্দরের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। একইভাবে গাড়িগুলোর ব্যবহার না হওয়ায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
নিয়ম অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি আসার ৩০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি নেওয়া না হলে নিলামে বিক্রি করা যাবে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, গাড়িগুলোর বিপরীতে মামলা থাকায় তারা অসহায়।
সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মহার্ঘ ভাতা পাবেন
Rain with thunder is forecast in the four divisions Department of Meteorology
The ex-bureaucrat objected to the call of the rooster, the neighbor threatened the police!
কাস্টমস কর্মকর্তা, গাড়ি আমদানিকারক ও বিডাররা জানান, আমদানি করা গাড়ির সঙ্গে ডকুমেন্টের মিল না থাকা, যত সিসির গাড়ি আনার কথা ছিল এর চেয়ে বেশি সিসির গাড়ি, পাঁচ বছরের পুরোনো গাড়ি (উৎপাদনের তারিখ থেকে বন্দরে আসার তারিখ পর্যন্ত) আনা, কারনেট সুবিধায় (পর্যটক সুবিধায়) আসাসহ নানা কারণে কাস্টমস থেকে ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় গাড়িগুলো বন্দরের শেডেই পড়ে রয়েছে।
সম্প্রতি বন্দরের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ইয়ার্ডের সাধারণ লেভেল থেকে একটু নিচু এলাকায় গাড়িগুলো রাখা হয়েছে। খালি চোখে ওপরের দিকে শুধু গাছগাছালি দেখা যায়। বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডের বাইরে কার শেড ও ইয়ার্ডের ভেতরে আধুনিক কার শেড করলেও এই ডাম্পিংয়ে এখন আর গাড়ি রাখা হয় না।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ৩৮৩টি গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য কাস্টমসকে কাগজপত্রসহ হ্যান্ডওভার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৯৭টি গাড়ির অবস্থা খুব নাজুক।
প্রতি মাসেই এসব গাড়ি সরিয়ে নিতে কাস্টমসকে অনুরোধ করলেও তারা নেয়নি। এই গাড়িগুলো সরিয়ে নতুন গাড়ি রাখা গেলে সেখান থেকে রাজস্ব আয় করা যেত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাশাপাশি নিলামে কঠোরতার কারণে এভাবে নষ্ট হচ্ছে আমদানি করা শত শত গাড়ি। অথচ এসব গাড়ির আমদানি মূল্য বাবদ লাখ লাখ মার্কিন ডলার বহু আগে চলে গেছে বিদেশে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বন্দরের বহুতল কার শেড, অকশন কার শেড এবং এফ শেডে ৯০০ গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৩ গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য কাগজ হস্তান্তর করা হয়েছে কাস্টমস হাউসের কাছে। সবশেষ গত সপ্তাহে হস্তান্তর করা হয়েছে ২৪ জন সাবেক সংসদ সদস্যের নামে আমদানি করা ল্যান্ড ক্রুজার।
কাস্টমস থেকে বিড করে পণ্য সংগ্রহকারীদের সংগঠন কাস্টমস বিডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব চৌধুরী বলেন, প্রতিটি মামলার একটি নির্ধারিত সময় থাকে। গাড়ির মামলাগুলো ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার কথা। যদি আদালত রায় না দেয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা বাতিল হয়ে যায়। সেই আলোকে কাস্টমস তা নিলামে ওঠাতে পারে। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তারা আইনের দোহাই দিয়ে গাড়িগুলো রেখে দিয়ে নষ্ট করে ফেলে। পরে আর এগুলো ব্যবহারও করা যায় না। সম্প্রতি এমন ৭৫টি গাড়ি নিলামে বিক্রি না করে টুকরো টুকরো করে রাখা হয়েছে। এগুলো টুকরো না করে নিলামে দিলে আমরা গাড়ির পার্টসগুলো অন্ততপক্ষে কাজে লাগাতে পারতাম।
অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মোহাম্মদ রফিক বলেন, কর্তৃপক্ষ কেবল বলছে মামলা আছে, মামলা আছে। কিন্তু যিনি নেবেন, তিনি মামলা নিষ্পত্তি করেই গাড়িগুলোর ছাড় করাবেন।
পুরোনো গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, কাস্টমসের নিলাম নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এসব গাড়ি নষ্ট হয়েছে। কাস্টমস চাইলে এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি করতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে একাধারে বন্দরের যেমন ক্ষতি করেছে, তেমনিভাবে দেশের আর্থিকও ক্ষতি করেছে। এসব গাড়ি ডলারে কেনা হয়েছে। আবার গাড়িগুলো ব্যবহার না হওয়ায় এগুলোর সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম। খোলা আকাশের নিচে বছরের পর বছর পড়ে থেকে গাড়িগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শতকোটি টাকা মূল্যের এ গাড়িগুলো এখন স্ক্র্যাপ হিসেবে ঘোষণা হতে যাচ্ছে। আইনি বাধ্যবাধকতায় এসব গাড়ি নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি কাস্টমসের।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গাড়িগুলো এভাবেই রাখতে হয়। সম্প্রতি আমরা ৭৪টি গাড়ি স্ক্র্যাপ হিসেবে ধ্বংস করেছি, সেগুলো নিলাম প্রক্রিয়ায় আছে। মামলা থাকলে কোনো পণ্যই আমরা নিলামেও নিতে পারি না, ধ্বংসও করতে পারি না।