মাটির সাথে মানুষের জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মাটি যখন শিল্পের ছোঁয়া পায়, তখন তা ঘরে আসে, আমাদের অভ্যন্তরকে সাজায়। মাটির তৈরি পণ্য যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে তখন একে বলা হতো মৃৎপাত্র। মৃৎপাত্র এমন একটি মাধ্যম যা পৃথিবীকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসে। মৃৎশিল্প কাদামাটি থেকে তৈরি সমস্ত দরকারী এবং শখের প্রত্নবস্তুকে বোঝায়। মৃৎশিল্প শিল্প ও সংস্কৃতির প্রাচীনতম রূপগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে। কিন্তু কিছু মানুষ এখনও এই পৈতৃক পেশাকে ধরে রেখেছে।
খালিশপুর থানা ছাত্রদল এর সাধারণ-সম্পাদক প্রার্থী, জামিউল রহমান অপূর্ব
দেশে স্টারলিংকসহ স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের দরজা খুলছে
বিদ্যুৎ নিয়ে বাংলাদেশকে আদানির আল্টিমেটাম, কি বলছে সরকার
বগুড়ার শেরপুরে মাটির হাঁড়ি, থালা-বাসন, ফুলের টব, মাটির পাড়, ফুলদানি, মোমবাতি, প্রদীপের ফুলদানি, শিশুদের খেলনাসহ নানা ধরনের উৎসবের সামগ্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে মাটির তৈরি এসব উপযোগী পণ্যের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে, যার কারণে বংশানুক্রমিক এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কুমোররা। আয়-ব্যয়ের অমিল এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য তারা ক্রমশই অন্য পেশায় ঝুঁকছে। মাটির পাত্রের পর্যাপ্ত চাহিদা না থাকায় কেউই এ পেশায় আসার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
দেখা গেছে, এ পেশার সঙ্গে জড়িতদের বেশির ভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের। তাদের কেউ কেউ ভারতে পাড়ি জমান। আবার কেউ কেউ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এ পেশা ছেড়ে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করছেন।
মির্জাপুর ইউনিয়নের কাশিয়াবালা পালপাড়ার সুশীল পাল বলেন, দাদার ব্যবসা ধরে রাখতে ৩১ বছর ধরে এ পেশায় কাজ করছি। কিন্তু আমার চার ছেলের কেউই এই পেশায় নেই। আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবারের আর কেউ এই পেশায় থাকবে না। দিন দিন মাটির পাত্রের চাহিদাও কমছে, বর্তমানে আমরা স্যানিটারি ল্যাট্রিন চক বা রিং বা কূপের আংটি তৈরি করছি। এর স্থায়িত্ব সিমেন্টের রিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি, শত শত বছরের পুরনো রিং এখনও অক্ষত অবস্থায় দেখা যায়। পটার লিপন পাল বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ পেশার শিল্পীদের বাঁচিয়ে রাখতে এখন দরকার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে মাটির পাত্রের প্রয়োজনীয়তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। তা না হলে ইতিহাসের পাতায় কুমারদের স্থান থাকবে।
এ প্রসঙ্গে শেরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক খান বলেন, কুমোরদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও ঋণ কার্যক্রমসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর এ কার্যক্রমকে গতিশীল করার চেষ্টা করবে উপজেলা প্রশাসন। আমি আশা করি এটি মৃত্যুর শিল্পে অনেকের আগ্রহ বাড়াবে।