ছাত্র অভ্যুত্থানের পর গত ৫ আগস্ট ছোট বোনকে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। তবে এর আগেই তার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ এবং শ্রম আইন সংশোধন—এ নিয়ে টানাপোড়েনের প্রধান কারণ ছিল।
এছাড়া বিচারক নিয়োগ নিয়ে গণভবন থেকে বঙ্গভবনে পাঠানো সারসংক্ষেপ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলে, যা তাকে ক্ষুব্ধ করে। এ ছাড়া শ্রম আইন সংশোধনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শ না করে তার স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা ছিল সম্পর্কের অবনতির আরেকটি দিক। এসব ঘটনার পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছাড়াই গত ৫ আগস্ট দেশ ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রেলের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাব্বানির শ্বশুর!
বেরোবিতে সমন্বয়কদের গণ ইফতারে খাবার পায়নি হাজারো শিক্ষার্থী
ডিজিএফআইয়ের সাবেক ডিজি সাইফুল আটক
দৈনিক রাজনৈতিক সাময়িকী 'জনতার চোখ'-এর বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সম্পর্কের অবনতি প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়- প্রথা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে দেশে ফেরার পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন ও ভারত সফরের পর এ প্রথা উপেক্ষা করেন। এরপর আর বঙ্গভবনে যাননি, কারণ তাদের (হাসিনা-সাহাবুদ্দিন) সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আমি কিছুই জানি না, তবুও আমাকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে বলা হচ্ছে। প্রচলিত নিয়ম উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতিকে পুতুল বানানো হয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রথা উপেক্ষা করার মানে কি?
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারক নিয়োগের বিষয়টি সামনে এলে গণভবন থেকে বঙ্গভবনে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এতে রাষ্ট্রপতি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন কারণ তিনি অনুভব করেছিলেন যে তাকে আইন ভঙ্গ করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপে। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি গত ১৮ এপ্রিল চিঠি পাঠিয়ে বলেন, সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার উল্লেখ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটি দীর্ঘদিনের প্রথা, যা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো সারসংক্ষেপে রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নিয়ম উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত বিরক্ত হন এবং স্বাক্ষর না করেই পাল্টা চিঠি পাঠান।
ওই চিঠিতে রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, আমি কিছু জানি না, তবে আমাকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে বলা হচ্ছে। প্রচলিত নিয়ম উপেক্ষা করে রাষ্ট্রপতিকে পুতুল বানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে তিনি জানতে চান, দীর্ঘ ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করার মানে কী? এ ছাড়া শ্রম আইন সংশোধন নিয়েও প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে বিদ্বেষ রয়েছে। কারণ, শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা না করেই তার স্বাক্ষরের জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছিল। এতে সভাপতি আরও ক্ষুব্ধ হন। এসব কারণে বঙ্গভবন ও গণভবনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। হয়তো এসব কারণেই ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেননি।