বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, নির্বাচনের ডেটলাইন দিতে এত দ্বিধা কেন? তিনি বলেন, তিনি ৫ আগস্টের চেতনাকে ধারণ করতে পারেননি। তাই আপনি আরেক স্বৈরশাসক বসিয়েছেন। আপনি বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরতন্ত্রের দানব বসিয়েছেন। তারা আপনাকে ব্যর্থ করবে।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় নোয়াখালীর চৌমুহনী রেলওয়ে ময়দানে আয়োজিত বিশাল জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বেগমগঞ্জ উপজেলা, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপি, অঙ্গসংগঠনও এ কর্মসূচির আয়োজন করে। সমাবেশের উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা বরকত উল্যাহ বুলু।
চারঘাটে এতিম মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে দুম্বার মাংস বিতরণ করলেন ইউএনও
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ক্রীড়া উপদেষ্টা।
চবির চাঁদপুর জেলা স্টুডেন্টস' এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইলিয়াস-রুপক
নতুন উপদেষ্টা তৈরির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আপনারা কয়েকজন নতুন উপদেষ্টা করেছেন। আপনার নতুন উপদেষ্টা করার অধিকার আছে। কিন্তু যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ ছিল তাদের মতামত নেওয়া দরকার ছিল। বিতর্কিত শেখ মুজিবের বায়োপিকে যে মেয়েটি অভিনয় করেছেন। তুমি তার স্বামীকে উপদেষ্টা বানিয়েছ।
রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপি সক্ষম, আপনারা জনগণের সমর্থনে সরকার হয়েছেন। বিএনপি আপনাকে সমর্থন করেছে। যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছে তারা সমর্থন দিয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমর্থন. তবে আমরা আপনাকে সমর্থন করছি। কিন্তু মাঝে মাঝে কথা বলতে হবে কেন?
তিনি বলেন, এক কেজি আলু কেন 75-80 টাকা হবে। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন? সিন্ডিকেটদের গ্রেফতার করতে পারছেন না কেন? দুর্বলতা কোথায় জানতে চাই। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণ এটা চায় না। কেন বাড়ছে, মানুষ নানা ধরনের প্রশ্ন করে।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রসঙ্গে রিজভী আরও বলেন, আপনারা নির্বাচনের কথা বলেন, কিন্তু নির্বাচনের কোনো ডেটলাইন দেন না। কিন্তু কেন এমন হল? এটা রহস্যময়। আপনি সংস্কার করবেন। সবাই মনে করেন অন্তর্বর্তীকালীন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সংস্কারের পাট দেবেন। সেটা তৈরি করুন, সিলেবাস তৈরি করুন, সিলেবাস তৈরি করুন এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে আগে শিক্ষা দিন। এটা তাদের ইচ্ছা বলেই মনে হয়। তারা এখন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আপনারা মনে করেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে থাকা বিএনপির লোকেরা অশিক্ষিত। আমরা আপনাকে আগে সংস্কার শেখাই, সংস্কার শেখাই, তারপর আপনি নির্বাচনের কথা বলেন।
এক উপদেষ্টার বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, তাদের একজন উপদেষ্টা বলছেন, খালি নির্বাচন, নির্বাচন হবে। কাউন্সেলরকে বলুন আপনি প্রধান শিক্ষক। আপনি আগে পড়াবেন তারপর আমরা শিখব, পড়াব। আমরা কি জানি না সংস্কার কাকে বলে? আপনি সাজেস্ট করতে পারেন। নির্বাচিত সরকারকে তিনি সেই প্রস্তাব দেবেন। এর জন্য ভোট দিন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে তিনি বলেন, সারাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে বলেই হাসিনার মতো নির্মম, নিষ্ঠুর ও রক্তচোষা স্বৈরাচারকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বাবার জমিদারি মনে করেন। আর এই জমিদারি রক্ষার জন্য সে দেশের মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। মনে করতেন তিনি একজন চাকর। যারা প্রতিবাদ করেছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোরালো কথা বলতে দেয়নি, যারা মিছিল করেছে, জনসভা করেছে, জনগণকে দাস মনে করে শান্তিতে বাঁচতে স্লোগান দিয়েছে। কেউ চিরতরে নিখোঁজ, কেউ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার। এই দানবকে তাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ছাত্ররা।
শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বাবার বাড়ি থেকে ভারতে কী নিয়ে গেলেন? তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের আদানির সঙ্গে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক দামে চুক্তি করেছে। যারা বিদ্যুতের সিন্ডিকেট করেছে, তারা বাজারে বিভিন্নভাবে সিন্ডিকেট করেছে। ওই সিন্ডিকেটের টাকা কি আপনি আপনার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে গেছেন? এটা জনগণের প্রশ্ন, এটাই আজ জনগণ জানতে চায়। আমরা শুনেছি বিদ্যুতের অর্থ পাচার হচ্ছে, আমরা শুনেছি মেট্রো রেলের অর্থ পাচার হচ্ছে। মেগা প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের কথা শুনেছি।
আপনি দুর্নীতি করে আপনার জনগণের মধ্যে টাকা বিতরণ করেছেন এবং টাকা পাচার করেছেন। যার খেসারত দিতে হবে জনগণকে, দিতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম, অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্য শামীম বরিশাল প্রমুখ। লাকী, চৌমুহনী পৌর বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন হারুন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষ্যা চন্দ্র দাস।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য গোলাম মমিত ফয়সাল, বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহফুজুল হক আবেদ, চৌমুহনী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মহসিন আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারিক রহমান আন্দোলনে নিহত ও আহত নেতাকর্মীদের আর্থিক সহায়তা দেন।