পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের সন্তানরা জঘন্য ঘটনার প্ররোচনা বা পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) আবেদন করতে যাচ্ছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমসহ আওয়ামী লীগের আরও কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হতে পারে। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন উ আহমেদসহ কয়েকজন সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা আসামির তালিকায় থাকতে পারেন।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে বিদেশি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কতিপয় অসাধু সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজশ ছিল বলে মনে করেন হাসিনা ও তাপসের বিরুদ্ধে আইসিটি মামলার প্রস্তুতিতে শহীদের সন্তানরা।
আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা
DR MUHAMMAD YUNUS CONGRATULATES TRUMP ON HIS VICTORY
বাংলাদেশের জন্য সহসা পর্যটন ভিসা চালু করছে না ভারত
তারা এ বিষয়ে কিছু প্রমাণও সংগ্রহ করেছেন। আইসিটি তদন্তে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে এবং এই আদালতে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হবে।
এ ছাড়া ওই সময় পিলখানায় শুধু সেনা কর্মকর্তাদেরই হত্যা করা হয়নি, তাদের পরিবারের সদস্যদেরও নির্যাতন করা হয়েছিল। প্রথমে মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের পরিবারের ওপর, তারপর সেনা অভিযান হবে না এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারকেও নির্যাতন করা হয়।
সেই নির্যাতনের কথা স্মরণ করেছে নিহতের পরিবারও। সর্বশেষ উদ্যোগের বিষয়ে শহীদ কর্নেল কুদরত এলাহী রহমানের একমাত্র ছেলে সাকিব রহমান বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, শহীদদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার প্রস্তুতি নিয়েছি। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত বিডিআর সদস্যরা দীর্ঘদিন কারাগারে আছেন, অনেকের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, অনেকের মৃত্যু হয়েছে। শেখ হাসিনা, তাপস, নানক, শেখ সেলিমসহ যারা এই পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যারা সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর কাছ থেকে পরিকল্পনাকারীদের আড়াল করতে চেয়েছিলেন, তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের আমরা আনতে চাই। পরিকল্পনা, বিচারের আওতায় আনা হবে। আমরা মনে করি পিলখানা হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ। আইসিটিতে এই অপরাধের বিচার হওয়া দরকার। এমনটা হলে আমরা দ্রুত বিচার পেতে পারি।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আমাদের আবেদনে নিশ্চিতকরণ ছাড়া কারও নাম উল্লেখ করব না। তদন্তে পাওয়া তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে জড়িত সবাইকে বিচারের আওতায় আনা অসম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, 'পিলখানা হত্যাকাণ্ডে বেশির ভাগ বিডিআর সদস্যকে ব্যবহার করা হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে।
শহীদের সব পরিবার এই উদ্যোগের সঙ্গে আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ না থাকলেও বাকি সব শহীদ পরিবারের সন্তানরা একসঙ্গে রয়েছে। সাকিব রহমান বর্তমানে আইনজীবী এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শিক্ষক।
এদিকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পুনঃতদন্ত কমিশন করা হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। গত ৩ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চান। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
এ প্রসঙ্গে সাকিব রহমান বলেন, 'দেশের যেকোনো নাগরিক এ বিষয়ে আদালতে রিট করতে পারেন। এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমরা নিজ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছি।
সেই সব পিতৃহীন সন্তান
১৫ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের বর্বরতায় ৫৮টি সেনা পরিবারের ১১০টি সন্তান তাদের পিতাকে হারিয়েছিল। তাদের বাবাদের হত্যার কয়েক মাস পর এই চারজনের জন্ম হয়েছিল। জন্মের পর বাবার আদর পায়নি তারা। তা ছাড়া ওই সময় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের সন্তানের সংখ্যাও কম নয় যাদের বয়স ছিল এক বছরের কম। এই শিশুদের তাদের পিতার একটি অস্পষ্ট স্মৃতি আছে.
নিহত দুই সেনা পরিবারের চার সন্তান তাদের বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে। বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের দুই সন্তান আকিলা রাইদা আহমেদ ও রাকিন আহমেদ তাদের বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছেন। বিডিআর বিদ্রোহের আট মাস আগে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে দুই সন্তানের মা মারা যান। আট মাস পর পিলখানায় তাদের বাবাকে হত্যা করা হয়। পিলখানায় নির্মম ঘটনার ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বাবাকে হারিয়ে বিধ্বস্ত আরেকটি শিশু মারা যায়।
অন্যদিকে, হত্যাকাণ্ডের সময় ও পরে নিহত বিডিআর সদস্যদের পরিবারের সন্তানদেরও একই পরিণতি হয়েছে। ঘটনার পর, 24 জানুয়ারী, 2010 পর্যন্ত, ঢাকায় 29 জন এবং ঢাকার বাইরে 40 জনের মৃত্যু হয়েছে, অর্থাৎ 69 জন বিডিআর জানিয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করা হয়েছে। এসব মৃত্যুর মধ্যে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, চক্রান্তকারীদের আড়াল করতেই এই মৃত্যু হয়েছে। বিচারবিহীন এসব অকাল মৃত্যু তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎকে চরম অনিশ্চিত করে তুলেছে।
সেনা সপরিবারে নিহত মেজর সৈয়দ মো. ইদ্রিস ইকবালের স্ত্রী প্রকৌশলী ড. তাসলিমা রফিক বলেন, নুসায়বা বিনতে ইকবাল, যার বয়স মাত্র ছয় মাস