Dhaka, শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

ভয়ংকর হয়ে উঠছে রাতের ঢাকা, ৩ এলাকা 'অপরাধের হটস্পট'

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৮:৩৬ এএম
Bangla Today News

ঢাকাসহ সারাদেশেই হঠাৎ করেই চুরি, ছিনতাই-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় নাকাল অবস্থা দেশের সাধারণ মানুষের। এসব অপরাধ হচ্ছেও নানা অভিনব পদ্ধতিতে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি, এমনকি অভিজাতপাড়ায়ও এমন ঘটনা ঘটছে। এতে নগরবাসীর দিন কাটছে আতঙ্কে।

অপরাধের হটস্পট হিসেবে রাজধানীর মোহাম্মদপুর রয়েছে তালিকার শীর্ষে। আর এই তালিকায় নতুন নাম লিখিয়েছে উত্তরা ও মিরপুর। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যেন আতঙ্কে কাটে স্থানীয় এলাকাবাসীর।

অপরাধের হটস্পট হিসেবে রাজধানীর মোহাম্মদপুর রয়েছে তালিকার শীর্ষে। আর এই তালিকায় নতুন নাম লেখালো খিঁলগাও থানা এলাকা। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যেন আতঙ্কে কাটে এলাকাবাসীর। এলাকায় ছিনতাই-ডাকাতি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর না হওয়ায় কমছে না অপরাধ।

মোহাম্মদপুর এলাকায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনার মধ্যে রয়েছে— নেসলে কোম্পানির গাড়ি থেকে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ছিনতাই; অস্ত্রের মুখে নারী শিক্ষার্থীর ব্যাগ কেড়ে নেওয়া; কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে একের পর এক হত্যার ঘটনা; জেনেভা ক্যাম্পের গোলাগুলি, কবজি কাটা আনোয়ার এছাড়া গণছিনতাইয়ের ঘটনা নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতব্যাপী মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ১৮ জনকে গ্রেফতার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।

মোহাম্মদপুর এলাকার আয়তন প্রায় সাড়ে ১২ বর্গ কিলোমিটার। তবে পুরো এলাকা জুড়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে না। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের রিং রোড এলাকার পূর্ব পাশে ছিনতাইয়ের কোনও ঘটনা নেই। একই চিত্র শিয়া মসজিদ হয়ে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ডের পূর্ব পাশেও।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো বেশি ঘটছে বেড়িবাঁধ এলাকার পশ্চিম পার্শ্বের এলাকায়। তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে— চাঁদ উদ্যান, সাত মসজিদ হাউজিং, লাউতলা, নবীনগর হাউজিং, ঢাকা উদ্যান, তুরাগ হাউজিং, বছিলা ৪০ ফিট, কাটাসুর ও গ্রীণ হাউজিং।

বেড়িবাঁধের পূর্ব পার্শ্বের এলাকার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ— চাঁন মিয়া হাউজিং, মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড, মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি, নবোদয় হাউজিং, শ্যামলি হাউজিং, শেখেরটেক, রফিক হাউজিং, আদাবর ১০ ও ১৬নং সড়ক।

পাশাপাশি রাজধানীর উত্তরায় এক দম্পতির ওপর প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে হামলার ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ও নাগরিক নিরাপত্তার অনিশ্চয়তাকে সামনে নিয়ে এসেছে। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।এ ঘটনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর কয়েকটি গুরুতর প্রশ্ন দেখা দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। নাগরিকরা প্রতিবাদ জানালে কেন তাদের জীবন বিপন্ন হয়?

এছাড়া  সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এ ব্লকের ২০ নম্বর লাইনে একদল সংঘবদ্ধ ডাকাত এক রাতে ছয়টি দোকান ও বাসায় হানা দিয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ভোর রাত ৪টা ২০ মিনিটে একটি প্রাইভেটকার থেকে তিন ব্যক্তি নেমে ‘মা মনি’ স্টোর নামে একটি মুদি দোকানের তালা কেটে ডাকাতি করে। তালা কেটে দোকানের মালপত্র ও নগদ টাকা লুট করে তারা চলে যায়। পরে আবার ফিরে এসে সাটার খুলে ক্যাশ বাক্স ও মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গাড়িতে তুলে নেয়। একই কৌশলে পাশের তিনটি দোকান ও দুটি বাসায় ডাকাতি চালায় চক্রটি।

একই কৌশলে কাছাকাছি তিনটি দোকানে ডাকাতি করেছে একই চক্র। ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে চক্রের অভিযান। এছাড়া ওই এলাকার আরও দুটি বাসায় একই সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

এর আগে পল্লবী এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ই ব্লকের ৫ নম্বর রোডের শহীদ জিয়া কলেজের উত্তর পাশের রাস্তায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি ছুরি, একটি রামদা ও চারটি ককটেল উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন সোহেল হাওলাদার (২৯), মো. রাজা (৩২), শাহাদাৎ হোসেন (৩৬), আবদুল মান্নান (২৯) ও মো. সুজন (৩০)।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া একটার দিকে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ই ব্লকের ৫ নম্বর রোডের শহীদ জিয়া কলেজের উত্তর পাশে সাগর জেনারেল স্টোরের সামনের রাস্তায় ডাকাতি করার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পাঁচ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের সঙ্গে থাকা তিন-চারজন দৌড়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়েছে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পেশাদার ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। ডাকাতির উদ্দেশ্যে তাঁরা দেশীয় অস্ত্র, ককটেলসহ একত্র হয়েছিলেন বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।

Leave a comment