Dhaka, সোমবার, মার্চ ১০, ২০২৫

সরিষা চাষে লাভ খরচের দ্বিগুণ, বগুড়ার মাঠে হলুদের সমারোহ

সিয়াম ইসলাম

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৩:১৩ পিএম
Bangla Today News

ভোজ্যতেলে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে সরিষার চাষ বাড়াতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। সরকারি প্রণোদনা প্রদানসহ সরিষার উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। স্বল্পসময়ে স্বল্পখরচে লাভজনক হওয়ায় সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে বগুড়ার কৃষকদের। এ কারণে প্রতিবছর বাড়ছে চাষের জমি। পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে হাটেবাজারেও বিক্রি করছেন চাষিরা। উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা চাষে কৃষক মাঠ দিবসসহ চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠে রয়েছে কৃষি বিভাগ। আগামীতে চাষাবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও তাদের প্রত্যাশা।

সরোজমিনে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেন চিত্রশিল্পি রং তুলি দিয়ে আল্পনা এঁকেছে হলুদের, সবুজ মাঠের দেশে হলুদের সমারোহ। বগুড়ায় মাঠের পর মাঠ এখন সবুজের ডাটায় হলুদ রঙ। জমিতে লাগানো সরিষার হলুদ ফুলের অপরূপ দৃশ্য মাঠে-প্রান্তরে শোভা পাচ্ছে। ইতিমধ্যেই জমি থেকে সরিষা উত্তোলন শুরু হয়েছে। অনেকেই মাড়াই করছেন। হাটেবাজারে বেচাকেনাও চলছে।

ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার তেলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্বল্প সময়ে স্বল্প পরিশ্রমে ভালো ফসল পেয়ে বগুড়ার চাষিরা সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা ক্ষেত থেকে সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বাজারে সরিষার ভালো দাম থাকায় চাষিরা উৎসাহিত হয়ে সরিষা চাষ করছে। জমি পতিত না রেখে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ করছে কৃষকরা। গত কয়েক বছরে জেলায় ১৮ হাজার হেক্টর জমি বেড়েছে সরিষা চাষে।

বগুড়ার গাবতলীর উনচুরকি এলাকার চাষী রবিউল ইসলাম জানান, সরিষা চাষে তেমন খরচ হয় না, খরচের দ্বিগুন লাভ হয় এ চাষে। নেপালতলী এলাকার আজিজুর রহমান জানান, সরিষায় তেমন পরিচর্যা লাগে না সার সেচও তেমন দিতে হয় না। স্বল্প খরচে লাভবান বলেই তারা চাষ করেন। 

সদর উপজেলার শাখারিয়ার চাষী আমিনুল জানান, পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাজারে তেল বিক্রি করা যায়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়, আবার খইল গবাদিপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।

কৃষি উদ্যোক্তা শাফিউল ইসলাম শাফি জানান, এ বছর সরিষার ভালো ফলন পেয়েছেন, বাজারে দামও বেশ ভালো। মণ ২৪শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে। শুকনা সরিষার দাম আরও বেশি বলে তিনি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে জমিতে বীজ রোপণের ৮০ দিনের মধ্যেই ফলন ঘরে তোলা যায়। বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচে প্রকার ভেদে ৫ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত সরিষা পাওয়া যায়। সরিষা চাষের পর জমির উর্বরা শক্তি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। সরিষা থেকে তেল সংগ্রহের পর যে খইল পাওয়া যায় তা গো-খাদ্য ও জৈব সার হিসেবে ব্যবহার হয়। জেলার কাহালু, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, দুপচাঁচিয়াসহ গোটা জেলায় উন্নত জাতের কালো ও হলুদ রঙের সরিষা চাষ হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) নাজমুল হক মণ্ডল বলেন, ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে সরিষা চাষে বগুড়ার চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ মাঠে রয়েছে। প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে তাদের পাশে রয়েছে কৃষি কর্মকর্তারা। চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় ৩৭ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে; যা থেকে ৬০ হাজার টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

বিএআরআই বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মাহমুদুল হাসান সুজা জানান, বগুড়া জেলায় প্রতিবছর সরিষা চাষের জমি বাড়ছে। কৃষক মাঠ দিবসের মাধ্যমে উন্নত জাতের সরিষা চাষে চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে সরিষা চাষে বগুড়ার কৃষক আগ্রহী হচ্ছে।

Leave a comment