স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিশ্বাস ও আস্থার ওপর। জীবনের অনেক চড়াই-উতড়াইয়ের সাক্ষী হয়ে স্বামী-স্ত্রী সুখে-দুঃখে একসঙ্গে কাটিয়ে দেন পুরো জীবন। সংসার জীবন শুরুর পর থেকে দুজনের উপর দুজনের বেশকিছু অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম নারীকে স্বামীর হকের প্রতি দায়িত্বশীল এবং সংসার আগলে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে স্বামীকে স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার এবং তার অধিকার আদায়ে সচেতন থাকার কথা বলেছে।
ইসলামে স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের সহযোগী বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা তোমাদের পোশাকস্বরুপ এবং তোমরাও তাদের পোশাকস্বরুপ।’ (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৮৭)
DR MUHAMMAD YUNUS CONGRATULATES TRUMP ON HIS VICTORY
Argentina is entering the field in the morning, who are in the eleven
800 million people are going hungry in the world every day, while more than 100 million meals are wasted
অনেক সময় দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী ভালোবেসে একে-অপরকে সম্বোধন করেন বিভিন্ন নামে। কখনও কখনও দেখা যায় স্বামী তার স্ত্রীকে বোন এবং স্ত্রী তার স্বামীকে ভাই বলে সম্বোধন করেন। দীর্ঘ দিনের অভ্যাস থেকে হোক বা মহব্বত কিংবা মান অভিমান থেকেই হোক, স্বামীকে ভাই বলে সম্বোধন করা ইসলামের বিধান অনুযায়ী উচিত নয়। কেননা হাদিস শরীফে এ বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে। তদরুপভাবে স্ত্রীকে বোন বলেও বলা যাবে না। দুজনের পারস্পরিক এমন সম্বোধনকে ইসলামে মাকরুহ বলা হয়েছে।
হাদিস শরীফে এসেছে, ‘এক লোক তার স্ত্রীকে বোন বলে ডাকলো। রাসুল (সা.) তা শুনে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সে কি তোমার বোন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে ডাকা অপছন্দ করেন এবং তাকে এভাবে ডাকতে নিষেধ করেছেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২২০৪) সুতরাং এমন সম্বোধন থেকে বিরত থাকতে হবে।
একইভাবে স্বামীকে ভাই বলে সম্বোধন করাও অনুচিত। তবে কেউ এমন বলে ফেললে এর কারণে বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হবে না। (ফাতহুল কাদির ৪/৯১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫০৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭০)
তবে স্বামী স্ত্রীকে বোন বলে সম্বোধনের মাধ্যমে এমন ইচ্ছা করে যে, আমার বোন যেমন আমার জন্য হারাম, তুমিও তেমনি আমার জন্য হারাম; তাহলে তা ‘জিহার’-এর অন্তর্ভুক্ত হবে। এমতাবস্থায় স্ত্রী-স্বামীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক বহাল থাকবে না যতক্ষণ না স্বামী ‘কাফ্ফারা’ আদায় করে।
আর জিহারের কাফ্ফারা হলো ধারাবাহিকভাবে দুই মাস রোজা রাখা বা ৬০ জন অসহায় ব্যক্তিকে খাওয়ানো। (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত : ৩)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের ‘জিহার’ করে তারা যেন জেনে রাখে যে, তারা তাদের মা নয়, তাদের মা তো তারাই যারা তাদেরকে প্রসব করেছে, তারা তো কেবল অশালীন ও মিথ্যা কথা বলে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী।’ (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত : ২)
তাই এ ধরনের অহেতুক ঝামেলা এড়াতে স্ত্রীকে বোন এবং স্বামীকে ভাই সম্বোধন করা থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ।
এমনকি স্বামীর নাম ধরে ডাকাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচিত নয়। তবে এ বিষয়টি নির্ভর করে দেশীয় সংস্কৃতি ও রেওয়াজের ওপর। বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে সাধারণত স্বামীর নাম ধরে ডাকাকে অসম্মানজনক ও বেয়াদবি মনে করা হয়, যদিও আরবদেশে স্বামীর নাম ধরে ডাকার প্রচলন ছিল। এ ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো, রেওয়াজ থাকলে এবং প্রয়োজন হলে যেকোনো সময় স্বামীর নাম উচ্চারণ করা যাবে। সম্মানসূচকভাবে স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে যেকোনো নামেই ডাকতে পারেন। কিন্তু ভাই তো আলাদা একটা সম্পর্ক। নাম নয়।
স্বামী-স্ত্রী যদি সমবয়সী হয় কিংবা বন্ধুসুলভ হয় এবং স্বামী যদি তার নাম ধরে ডাকলে মনে কষ্ট না পায়, তাহলে নাম ধরে ডাকলে কোনো সমস্যা নেই। কেননা ইসলামে এর নজির আছে। ইবরাহিম (আ.) যখন তার স্ত্রী হাজেরা এবং শিশুপুত্র ইসমাইলকে মক্কার জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে চলে যাচ্ছিলেন, তখন পেছন থেকে তার স্ত্রী তাকে এভাবে ডাকেন—‘হে ইবরাহিম!’ পুরো ঘটনা সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে স্বামীর নাম ধরে ডাকার প্রচলন আছে। সুতরাং এ বিষয়ে সামাজিক নিয়ম-নীতি, সম্মান ও ভদ্রতার প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি। তবে নাম ধরে ডাকা গেলেও ভাই বলে ডাকার কোনো বিধান ইসলামে নেই।