নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০২:৪৭ পিএম
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জৈন্তাপুরের এক ব্যক্তির চিকিৎসা চলছে দেড় মাস ধরে। তাকে দেখাশোনার জন্য তার মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে থাকছে ৫ বছরের ছোট বোনও।
সেই শিশুকে গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে হাসপাতালের বাথরুমে নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি রাসেল মিয়া (৩৫) নামে এক যুবক ধর্ষণের চেষ্টা করে।ঘটনার জানাজনি হলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে হাসপাতালের দায়িত্বরত কয়েকজন কর্মী ও ওসমানী মেডিকেলে দায়িত্বরত পুলিশের সদস্যরা ওই শিশুর পরিবারকে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- অভিযুক্ত রাসেল মিয়া সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ইসহাকপুরের বাসিন্দা। গত ২১ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি হয়ে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি পেয়িং বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে রাসেল। এই ওয়ার্ডে নিউরোলজি, ডার্মাটোলজি ও ডেঙ্গুরোগীরা পেয়িং বেডে চিকিৎসা নেন এবং সবাই একই বাথরুম ব্যবহার করেন। এই বাথরুমেই ঘটনাটি ঘটেছে।
ভুক্তভোগী শিশুর মা বলেন- ‘সেদিন সকালে আমার মেয়ে বাথরুমে যায়। তখন রাসেল মিয়াও বাথরুমে প্রবেশ করে। এর কিছুক্ষণ পর আমার মেয়ে কান্না করে বেরিয়ে আসে। তখন আমার মেয়ে আমাকে বলে, রাসেল বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে নেয় এবং তাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। তখন সে জোরে চিৎকার করলে রাসেল তাকে ছেড়ে দেয়।
এরপর হাসপাতালের ডাক্তারদের বললে তারা বলেন- মামলা করব কি না। কিন্তু মামলা করা ও চালানোর মতো সামর্থ্য আমার নেই। এটা তাদের জানালে দুইজন পুলিশ এসে আমাদের আরেকজনের কাছে নিয়ে যায়। তারা সেখানে আমার টিপসই রাখে। আমাকে বলে এসব জানাজানি হলে আমার মেয়ের ইজ্জত যাবে। ওই ছেলে পাগল। তাই আমার আর কিছু করার নেই। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো পাগলকে কেন সাধারণ রোগীদের সঙ্গে রাখা হলো? আর পাগল কীভাবে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে।
’শিশুর মা আরও বলেন- ‘আমার পুরিয়ে আইয়া কইছে হে তাইরে অনেক জোর জবরদস্তি করছে। আমার পুরি এখনো ডরায়। আমার ছোট পুরির সঙ্গে রাসেল এই খারাপ কাজ করার পরও এখন এই ওয়ার্ডেই আছে। তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। কারণ হের শক্তি বেশি। হে এখনো জোর গলায় মাতে। হের মতো রোগী থাকলে আজকে আমার পুরির সঙ্গে এই ঘটনা করছে, কালকে আরেকজনের পুরির সঙ্গে আবারও ইসব করব। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ। এর লাগি চুপ কইরা বইয়া রইছি।’
এ ব্যাপারে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আকবর হোসেন বলেন- ‘আপনাদের কাছ থেকে জেনে ওসমানী মেডিকেলের দায়িত্বে যে পুলিশ সদস্য আছেন তার সঙ্গে কথা বললাম। তিনি আমাকে বলেছেন, শিশুটির বয়স পাঁচ বছর। সে যখন ওয়াশরুমে যায় তখন দরজা হয়তো লাগায়নি। তখন যে ছেলেটি ওয়াশরুমে প্রবেশ করে সেও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত। তখন বাচ্চাটা চিৎকার দেয়। আশপাশে আরও লোক ছিল। কিন্তু পুলিশকে তখন ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে কেউ বলেনি। এটা হচ্ছে বিষয়। এখন যার সঙ্গে ঘটনা হয়েছে তার পরিবারের কেউ যদি অভিযোগ না করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই।’
এ ব্যাপারে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন- ‘এ ধরনের কোনো খবর আমরা শুনিনি। এ ধরনের কোনো ঘটনা হলে ভিকটিমের পক্ষে আমাদের পুলিশকে দরখাস্ত করে জানাবে। সাধারণত ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় পুলিশ ভিকটিমকে নিয়ে আসে। সরাসরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আমাদের না জানালে আমরা কিছু করতে পারব না।’
৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তার, নার্সসহ সবাই এই বিষয়টি জানেন কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘এ ধরনের স্পর্শকাতর ঘটনা সরাসরি পুলিশ নিয়ে আসে। পুলিশের লোক হাসপাতালে আছে। এখন পুলিশ বাই ফোর্স তাদের বায়েস্ট করছে কি-না সেটা দেখতে হবে। এখন পুলিশের বলা উচিত তারা কেন স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিচ্ছে। এটা সরাসরি পুলিশ ডিল করার কথা।’
এ রকম একজন অভিযুক্ত রোগী অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।
মোঃ আক্তার হোসেন