Dhaka, শুক্রবার, ডিসেম্বর ২০, ২০২৪
logo

৫ দিনের ব্যবধানে ২ জাহাজে আগুনে নাশকতার সম্ভাবনা দেখছে শিপিং করপোরেশন


Mohin Talukder   প্রকাশিত:  ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৯:০৫ পিএম

৫ দিনের ব্যবধানে ২ জাহাজে আগুনে নাশকতার সম্ভাবনা দেখছে শিপিং করপোরেশন

চট্টগ্রাম বন্দরের মোহনার কাছেই দাউ দাউ করে জ্বলেছে বাংলার সৌরভ। ১৯৮৬ সালে তৈরি এবং ১৯৮৮ সালে জ্বালানি তেল পরিবহনে রেজিস্ট্রেশন পাওয়া এ অয়েল ট্যাংকারের এটাই ছিল শেষ ট্রিপ। তেল খালাস শেষ হলেই দায়িত্ব থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল এর। কিন্তু আগুনে জাহাজটির ব্যাপক ক্ষতি ছাড়াও মারা গেছেন এক নাবিক।

এদিকে আটত্রিশ বছরের শেষ ট্রিপে তেল খালাস করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাহাজ বাংলার জ্যোতি এবং বাংলার সৌরভ আগুনে পুড়ে যাওয়া নিয়ে ওঠেছে নানা প্রশ্ন। পাঁচ দিনের ব্যবধানে তেলবাহী দুই জাহাজে আগুনের ঘটনাকে সম্ভাব্য নাশকতা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)।

 

গতরাতে 'বাংলার সৌরভ'-এ আগুন লাগার পর আজ সকালে চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএসসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক। তিনি বলেন, দেশের জ্বালানি তেলের সরবরাহ লাইন ধ্বংস করতেই পরিকল্পিত এ আগুন লাগানো হয়েছে সন্দেহে চলছে তদন্ত।

এর আগে গত সোমবার সকালে একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুনে পুড়ে গেছে বিএসসির আরেকটি অয়েল ট্যাংকার বাংলার জ্যোতি। এতে সৃষ্ট বিস্ফোরণের প্রাণ গেছে তিনজনের আর আহত হয়েছেন বেশ কজন। বাংলার সৌরভের মতো এটিও ১৯৮৬ সালে তৈরি এবং জ্বালানি তেল পরিবহনে রেজিস্ট্রেশন পেয়েছিলো ১৯৮৮ সালে। দুটি জাহাজই তৈরি হয়েছিলো ডেনমার্কে।

বিস্ফোরণ এবং আগুন লাগার আগে বাংলার জ্যোতি জাহাজে ১১ হাজার ৭শ মেট্রিক টন এবং বাংলার সৌরভে ১১ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল ছিল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জন্য আনা হয়েছিল বিপুল এ জ্বালানি তেল। একেবারে শেষ ট্রিপে দুটি ট্যাংকারে একই ধরনের আগুন লাগা এবং বিস্ফোরণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন। নাশকতার আগুনে জাহাজ দুটি পুড়েছে কিনা -- সেটা মাথায় রেখেই শুরু হয়েছে তদন্ত।

চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসুদ ইকবাল বলেন, ‘বাংলার জ্যোতিতে আগুন লাগার পর সেইফটি মেজরস বারবার চেক করা হয়েছে এবং অগ্নিনির্বাপণে বেশকিছু মহড়া হয়েছে। এরপরও কেনো এ অগ্নিকাণ্ড, সেটা তদন্ত সাপেক্ষ!’

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন বহির্নোঙরের বড় জাহাজ থেকে তেল খালাসের কাজে 'বাংলার জ্যোতি' ও 'বাংলার সৌরভ'-কে ব্যবহার করে। গতরাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বহির্নোঙরে অবস্থান করা বাংলার সৌরভে আগুন লাগে। জাহাজটি আজ সকালে তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়বার কথা ছিল। আগুনের ঘটনায় জাহাজ থেকে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়া একজন মারা গেছেন। এর বাইরে ৪৭ ক্রু ও কর্মীকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী।

আজ সংবাদ সম্মেলনে বিএসসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, বাংলার জ্যোতিতে আগুন লাগার পর নাশকতার কথা মাথায় রেখেই তদন্তকারীরা অগ্রসর হচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বাংলার সৌরভে ফায়ার ড্রিল করা হয়। এই জাহাজটিতে কোনো মেরামতের কাজও চলছিল না।

তিনি জানান, গতরাতে হঠাৎ জাহাজের সামনের দিকে প্রায় একই সঙ্গে চারটি জায়গায় স্ফুলিঙ্গ দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ক্রুরা। সেসময় জাহাজের কাছ থেকে একটি স্পিডবোট সরে যেতে দেখা যায় বলেও জানান তারা। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্য এই নাশকতা হতে পারে।