Dhaka, রবিবার, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪
logo

সিরাজগঞ্জের তারাশের চলনবিল এলাকার মাটির তৈরি ঘরের ছবি।


নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রকাশিত:  ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০১:২৬ পিএম

সিরাজগঞ্জের তারাশের চলনবিল এলাকার মাটির তৈরি ঘরের ছবি।

চলনবিলের শতবর্ষ ধরে গ‌রি‌বের এ‌সি খ‌্যাত মা‌টির ঘর কালের বিবর্তনে বিল‌প্তির প‌থে


এক সময়ের চলন‌বি‌ল অঞ্চলে প্রায় সবারই মাটির তৈরি ঘরে বসবাসে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে গ‌রি‌বের এসি খ্যাত এই মাটির ঘরগু‌লো আজ বিলু‌প্তির প‌থে। ত‌বে এখনও কিছু জায়গায় কালের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে দৃ‌ষ্টিনন্দন কিছু মা‌টির ঘর। ঘর গু‌লো বি‌ভিন্ন আল্পনায় আঁঁকা মজবুত ও আরামদায়ক।

মাছের জন্য বিখ্যাত দেশের বৃহত্তম এই চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, পাবনার চাটমোহর, নাটোরের গুরুদাসপুর এবং সিংড়া উপজেলা এলাকায় বে‌শির ভাগ মানু‌ষের বা‌ড়ি ছিল মা‌টির। মা‌টির ঘর তৈরী‌তে খরচ কম হওয়ায় গরিব মানু‌ষের আস্থা ছিল মা‌টির ঘ‌রেই। নিরাপদ ও আরামদায়ক বসবাসের জন্য মাটির ঘর এর বিকল্প ছিল না তাই সবাই মা‌টির ঘর নির্মাণ কর‌তো। মা‌টির ঘ‌রে শীত কা‌লে যেমন বেশী শীত অনুভুত হ‌য় না তেম‌নি গরম কা‌লেও বেশী গরম অনুভুত হয় না, যা‌কে ব‌লে গরী‌বের এ‌সি। এ ঘ‌রের আরও এক‌টি বৈ‌শিষ্ট হ‌লো যুগের পর যুগ টি‌কে থা‌কে কোন রকম সংস্কার কাজ ছাড়াই। বাড়ীর মে‌য়েরা এসব ঘর এর দেয়াল  লেপে আল্পনা এঁকে দৃষ্টিনন্দন করে রাখতেন।

মা‌টির ঘ‌রে বসবাস ক‌রে এমন একা‌ধিক ব‌্যক্তির সা‌থে কথা ব‌লে জানা যায়, অল্প খরচে নির্মিত মাটির ঘর অতুলনীয়। মূলত গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরমে মাটির ঘর শীতল থাকে আবার শীতকালে প্রচণ্ড শীতেও ঘরের ভেতরে গরম অনুভূত হয়। লালুয়া মা‌ঝিড়া গ্রা‌মের ফ‌রিদ ব‌লেন, শীত ও গ্রীষ্ম উভয় ঋতু‌তে বসবা‌সের জন‌্য মা‌টির ঘর এর চে‌য়ে আরামদায়ক আর কিছু হ‌তেই পা‌রেনা। তাই সামর্থ ও সন্তান‌দের চাপ থাকার পরও মা‌টির ঘ‌রের মায়া ত‌্যাগ কর‌তে পার‌ছি না।

স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল আলম বলেন, ছে‌লে মে‌য়ে‌দের ব‌লে‌ছি তোমা‌দের জন‌্য পাকা বা‌ড়ি ক‌রে দি‌চ্ছি । কিন্তু আমি মা‌টির ঘ‌রেই থাক‌বো। কেননা মাটির ঘরে বসবাসের যে আরাম সেটা আমরা ছাড়তে পারবো না। তবে সময়ের চাহিদায় বর্তমা‌নে নতুন ক‌রে কেউ আর মা‌টির ঘর নির্মাণ কর‌ছে না। ত‌বে বর্তমা‌নে এই ঘর নির্মাণ করা কা‌রিগড়‌ও খু‌জে পাওয়া ক‌ঠিন

স্থানীয়রা আরো বলেন, এক সময় লোকজন বাড়ির সব ঘরই মাটি দিয়ে তৈরি করতেন। সাধারনত কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে গ্রাম অঞ্চলের ঘরামীরা মাটির ঘর নির্মাণের চুক্তি করতেন এবং তা বর্ষাকাল আসার আগেই শেষ করতেন। বর্ষাকা‌লে এই ঘর নির্মাণ সম্ভব নয় কারন মা‌টি কাঁদা ক‌রে ১/২ ফুট উচু ক‌রে প্রা‌চি‌রের ম‌তো ক‌রে দেওয়াল দি‌তে হয়। এই দেয়াল রো‌দে শুকা‌লে তার উপ‌রে আবার দেওয়াল দি‌তে হয়, এভা‌বে যতক্ষন না কাং‌খিত উচ্চতায় পৌছায়। গ্রামীন ভাষায় এই দেয়াল কে বিট দেওয়া ব‌লে। 

ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক প্রবীণ মুরুব্বী জালাল মিয়া বলেন এ সব গ‌রি‌বের এসি খ্যাত বড় বড় মাটির ঘর শতবর্ষ পরও এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সময়ের প্রয়োজনে এবং মানু‌ষের অর্থনৈ‌তিক অবস্থার কার‌নে গ্রামের ঘরগুলো এখন ঢেউ টিন, ইট, বালু, পাথর দিয়ে তৈরি হওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে চলনবিলের এসি খ্যাত মাটির তৈরি এই ঘর গু‌লো।  

 



আমিরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ।