Dhaka, বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
logo

মাটির ৭শ' মিটার গভীরে গবেষণাগার তৈরিতে খরচ ৩০ কোটি ডলার


নিজস্ব প্রতিবেদক   প্রকাশিত:  ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০১:৫২ এএম

মাটির ৭শ' মিটার গভীরে গবেষণাগার তৈরিতে খরচ ৩০ কোটি ডলার

মাটির নিচে ১২ তলাবিশিষ্ট বেলনাকৃতির একটি পানির পুলে রয়েছে আলো সনাক্তকারী হাজার হাজার টিউব। বৃত্তাকার এই গবেষণাগার থেকেই অধরা মৌলিক কণা নিউট্রিনোর রহস্যের দুয়ার খুলবে। পারমাণবিক রিঅ্যাকশনে ভূমিকা রাখা এই নিউট্রিনো গবেষণায় মহাজাগতিক অনেক রহস্যের দ্বার খুলবে হবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

 

বিজ্ঞানের ভাষায় নিউক্লিয় সংযোজনের মধ্য দিয়ে তৈরি হয় নিউট্রিনো। এই পদ্ধতিতে শক্তি পায় সূর্য, তারা। তেজক্রিয়তা ক্ষয় থেকে তৈরি হয় মৌলিক এই কণা, এই তেজস্ক্রিয়তা তাপ সরবরাহ করে পৃথিবীর অভ্যন্তরে। পরমাণু রিঅ্যাক্টরেও তৈরি হয় এই নিউট্রিনো। মহাবিশ্ব গঠনে নিউট্রিনোর ভূমিকা অনেক। তারা আর গ্যালাক্সির আকৃতিতেও ভূমিকা আছে ছোট এই কণার।

 

 

 

একরকম ভরশূন্য এই মৌলিক কণা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার জন্য মাটির নিচে গবেষণাগার তৈরি করছে চীন। গুয়াংপং প্রদেশের প্রান্তিক এলাকায় মাটির ৭০০ মিটার গভীরে ৩০ কোটি ডলার খরচে তৈরি হচ্ছে এই গবেষণাগার। জিয়াংমেন আন্ডারগ্রাউন্ড নিউট্রিনো অবজারভেটরি জুনোর অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে বিগত ১০ বছর ধরে। কয়েক মাসের মধ্যে ৩০ বছরের জন্য এটি ব্যস্ত হয়ে পড়বে গবেষণা আর তথ্য সংগ্রহের কাজে।

 

 

 

জুনোর লক্ষ্য, অতিক্ষুদ্র মৌলিক কণা নিউট্রিনোর মধ্যে বেশি ভর আছে কোনগুলোর। সাধারণত নিউট্রিনো সাধারণ বস্তুর মধ্য দিয়ে গেলে এগুলো সনাক্ত করা কঠিন। যে কারণে এই অতিক্ষুদ্র বস্তু নিয়ে গবেষণা করাও কঠিন। অ্যান্টার্কটিকার দক্ষিণ মেরুর 'আইসকিউব নিউট্রিনো অবজারভেটরি' গবেষণা কেন্দ্র জানায়, প্রতি সেকেন্ডে ১০০ লাখ কোটি নিউট্রিনো মানবদেহ অতিক্রম করে যায়।

 

 

 

জুনোর ভারপ্রাপ্ত উপ-ব্যবস্থাপক কাও জুন বলেন, 'একটি নিউট্রিনো আরেকটি নিউট্রিনোর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ এই কণার প্রকৃতিতে ভূমিকা অনেক। জানতে পারবো কীভাবে প্রকৃতি এমনকি মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে। উত্তর এখনও জানি না, তাই জুনোকে দিয়ে নিউট্রিনোর ওপর পরীক্ষা চালাবো। পৃথিবীর মৌলিক নিয়মনীতি নিয়ে জানবো।'

 

 

 

জুনো কর্তৃপক্ষ জানায়, নিউট্রিনোর ভরের বিস্তারিত জানতে পারলে পদার্থ বিজ্ঞানের অনেক রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব। প্রকৃতির নিয়ম অনুসন্ধানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই গবেষণা। যদিও যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা এখনও আবিস্কৃত হয়নি, তবে অনেক দেশ নিউট্রিনো গবেষণার মধ্য দিয়ে মহাজাগতিক নানা রহস্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

 

 

 

কাও জুন বলেন, '১০ বছর আগে এই ল্যাব নিয়ে গবেষণা শুরু করি। এই ল্যাব তৈরির পেছনে আমাদের অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। অবশেষে এই ল্যাবের কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। আগামী বছর থেকেই তথ্য সংগ্রহ শুরু করবো। নিউট্রিনোর ভর পরিমাপের প্রাথমিক লক্ষ্য ছঢ বছরেই অর্জন করবো। তবে এই পর্যবেক্ষণ ৩০ বছর চালাবো ।'

 

 

 

যুক্তরাষ্ট্রে নিউট্রিনো গবেষণার জন্য ডিপ আন্ডারগ্রাউন্ড নিউট্রিনো এক্সপেরিমেন্ট ডিউন স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ফার্মিল্যাব। সাত বছর ধরে চলছে ৩০০ কোটি ডলারের এই ল্যাব স্থাপনের কাজ। অধরা ক্ষুদ্র এসব কণা নিয়ে জানার শেষ নেই বলে মনে করে জুনোর বিজ্ঞানীরা। তাদের প্রত্যাশা, চীন প্রথম দেশ হবে, যে দেশ নিউট্রিনোর ভরের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হবে।

 

 

 

কাও জুন আরও বলেন, 'সাধারণ গবেষণা থেকে কার্যক্রম পরিচালনা পর্যন্ত মাঝে অনেক দূরত্ব। অনেক পদক্ষেপ আমাদের নিতে হবে। অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাই প্রাথমিকভাবে অল্প লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।'

 

 

 

কার্যক্রম শুরু করলে জুনো কাজ করবে জোতির্বিজ্ঞানের নানা বিষয় যেমন সুপারনোভা, সূর্য, চাঁদ নিয়ে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পুরনো মৌলিক কণা নিউট্রিনো। নিউট্রিনো নিয়ে গবেষণা, মহাবিশ্ব আর পৃথিবীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।

 

 

 

প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে ৩০০ নিউট্রিনোর উপস্থিতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই মৌলিক কণা সনাক্তে বিজ্ঞানীদের বেছে নিতে হয়েছে মাটির নিচে বা পানির নিচের স্থান। নিউট্রিনো গবেষণার জন্য গবেষণাগার জুনো তৈরিতে শ্রম দিয়েছেন বিশ্বের ১৭টি দেশ ও অঞ্চলের ৭৪টি প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৭০০ বিজ্ঞানী। প্রস্তুত হলে এই জুনো হবে নিউট্রিনো গবেষণার জন্য বিশ্বের তৃতীয় গবেষণা কেন্দ্র। এর আগে এ ধরনের গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে জাপান আর যুক্তরাষ্ট্র।