সিয়াম ইসলাম প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম
আবদুল কাদের শেখ (৮৫) ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগম (৭৫) সব সময় একসঙ্গে মৃত্যু কামনা করতেন। তিনি সবাইকে বলতেন যে তাদেরও কবর দেওয়া হবে। সেটাই। জাহানারা বেগমের মৃত্যুর ১৪ ঘণ্টা পর একই পথে মারা যান তার স্বামী কাদের শেখ। পরে একসঙ্গে জানাজা শেষে একই কবরস্থানে তাদের পাশাপাশি দাফন করা হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর ১নং কলোনী সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জাহানারা বেগম মারা যান। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন শোকাহত স্বামী আব্দুল কাদের শেখ। মৃত্যুর আগে স্ত্রীকে শেষবারের মতো দেখতে পারেননি তিনি।
জানা গেছে, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই বাড়িতে থাকতেন ভূমিহীন দম্পতি আবদুল কাদের শেখ ও জাহানারা বেগম। আব্দুল কাদের শেখ রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মৃত আব্দুল কাদের শেখের ভাতিজা আব্বাস আলী জানান, তার শ্বশুরবাড়ির ৬০ বছরের সংসার ছিল। তাদের মধ্যে অনেক প্রেম ছিল। খালার মৃত্যুর খবর শুনে চিৎকার করে উঠল, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছ, আমি তোমার কাছে আসছি। পরদিন সকালে তিনিও ফুফুর লাশ দেখার আগেই মারা যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বার্ধক্যজনিত কারণে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাহানারা বেগমের মৃত্যু হয়। বুধবার সকালে পরিবারের সদস্যরা জাহানারার মরদেহ শেষবারের মতো দেখাতে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িতেই মৃত্যু হয় আবদুল কাদেরের।
পরে গতকাল দুপুর আড়াইটার পর আলাদীপুর ১নং কলোনী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা মাঠে স্বামী-স্ত্রীর একত্রে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে স্বামী-স্ত্রীকে আলাদীপুর ১নং কলোনী আশারণ্য প্রকল্প সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
প্রতিবেশী খোরশেদ আলম বলেন, জীবিত থাকা অবস্থায় এই দম্পতি সব সময়ই কামনা করতেন যে, তারা একসঙ্গে মরবেন এবং কবরে একসঙ্গে থাকবেন। আল্লাহ তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, স্বামী-স্ত্রীর একই দিনে স্বাভাবিক মৃত্যু দেখা যায় না। স্ত্রী, একমাত্র ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতি-নাতনি নিয়ে তাদের সংসার ছিল।