নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৭:৫৭ এএম
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে আ.লীগ নেতার কারসাজিতে জেলেদের ভিজিএফের চাল পাচ্ছেন না প্রকৃত জেলেরা। জেলেদের ন্যায্য অধিকার এ চাল পাচ্ছেন প্রবাসী, মৃত ও নামে-বেনামের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ আর অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় মৎস্য অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের যোগসাজশে তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়। প্রকৃত জেলে হওয়া সত্ত্বেও কার্ড করতে দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় চরকালকিনির ৩নং ওয়ার্ডের মৎস্যজীবী মো. রুবেল, নুরুল করিমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
অপরদিকে একই ইউনিয়নের মৃত ব্যক্তি হাফিজউল্যাহ, আলী হোসেন, প্রবাসী বাহার উদ্দিন, মো. কবিরের নামসহ ‘অস্তিত্বহীন’ ৬০০ ভুয়া জেলের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ইউনিয়নে ৩ হাজার জেলে কার্ডের মধ্যে ৬শ জনের ভুয়া তথ্য বেরিয়ে আসায় স্থানীয় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া হাজিরহাট ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের যোগসাজশে সচ্ছল পরিবার পাচ্ছেন জেলেদের চাল।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ৭নং হাজিরাহাট ইউনিয়নে ৪শর বেশি ভুয়া জেলে রয়েছে। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান ও কমলনগর উপজেলা আ.লীগ সভাপতি মো. নিজাম উদ্দীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে জেলেদের নাম বসিয়ে সরকারের খাদ্য সহায়তায় অনিয়ম করেছেন।
উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নে ৬শ জেলের মধ্যে প্রায় ৪শ জন ও চরকালকিনি ইউনিয়নেই ৩ হাজার জেলে তালিকার মধ্যে ৬শ জনের নামই ভুয়া পেয়েছে মৎস্য অফিস। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জেলেদের জন্য সরকারি ভিজিএফ সহায়তার চাল বিতরণের তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অতিপুরোনো।
এ সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলমান হালনাগাদ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যাচাই-বাছাই করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, বিগত সরকারের সময়ে স্থানীয় মৎস্য অফিস বিভিন্ন ইউনিয়নের একশ্রেণির সুবিধাভোগী দালালদের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে জেলেদের তালিকাসহ কার্ড প্রদান করে। এতে প্রকৃত জেলেদের পরিবর্তে ভুয়া জেলের নাম দেখিয়ে সরকারের সুযোগ-সুবিধা লুটে নেওয়া হয়।
কমলনগর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীর অভয়াশ্রমকে ঘিরে বছরের নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত জাটকা ইলিশ সংরক্ষণে, মা-ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং মে থেকে জুলাই (৬৫ দিন) নদীতে সব ধরনের জাল ফেলাসহ মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এ সময় জেলেদের খাদ্য সহায়তার জন্য যথাক্রমে জেলেপ্রতি ৪০ কেজি করে ৪ মাস, ২৫ কেজি করে ২২ দিন ও ৬৫ দিনের জন্য ৮৬ কেজি করে চাল প্রদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত জেলে কার্ডের বিপরীতে বরাদ্দপত্র (ডিও লেটার) মতে গোডাউন থেকে চাল গ্রহণ করে নেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. মহসীন জানান, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নামে হওয়া বরাদ্দপত্রের বিপরীতে গোডাউন থেকে সমুদয় খাদ্য সহায়তার চাল এক সঙ্গে সরবরাহ করা হয়।
চরকালকিনি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাস্টার মো. ছায়েফ উল্যাহর দাবি, বাদ পড়া জেলেদের অধিকাংশই এখন বয়স্ক। এ ছাড়া কিছু জেলে তাদের পেশা পরিবর্তন করে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
৭নং হাজিরাহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও কমলনগর উপজেলা আ.লীগ সভাপতি মো. নিজাম উদ্দীন বর্তমানে পলাতক থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য সাহা জানান, কমলনগর উপজেলায় নিবন্ধিত মোট জেলের সংখ্যা ১৩ হাজার ১৬৭ জন। এর মধ্যে চরকালকিনি ইউনিয়নের ৩ হাজার জেলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে সরকারি সুবিধা ভোগ করছিলেন। চলমান হালনাগাদ তালিকা থেকে কালকিনি ইউনিয়নের ভুয়া, প্রবাসী ও মৃত ব্যক্তিসহ ৬শ জনকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলার নয়টি ইউনিয়নেই হালনাগাদ করার কাজ চলছে। এ ছাড়া তালিকা তৈরিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়টি এ কর্মস্থলে তার যোগদানের পূর্বের ঘটনা বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া হাজিরহাট ইউনিয়নে একাধিকবার জেলেদের নাম হালনাগাদে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের হালনাগাদের চিঠিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস কালবেলাকে বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়নের জেলেদের তালিকায় ভুয়া নামের বিষয়ে আমরা তথ্য যাচাই-বাছাই করে হালনাগাদের কাজ করছি। প্রকৃত জেলেদের নাম তালিকা থাকার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।