Dhaka, বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
logo

আজ বিতর্কিত কাজ করলে দুদিন পর কোন মুখে ভোট চাইতে যাবেন: তারেক রহমান


সিয়াম ইসলাম   প্রকাশিত:  ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:০৯ এএম

আজ বিতর্কিত কাজ করলে দুদিন পর কোন মুখে ভোট চাইতে যাবেন: তারেক রহমান

দলীয় নেতাকর্মীদের সব বিতর্কিত কাজ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কিছু কিছু সহকর্মীর মনে ৫ আগস্টের পর একটি নতুন উদ্ভূত অনুভূতি এসেছে। অনুভূতিটা হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমরা সরকার গঠন করে ফেলেছি। আমি বলতে চাই, আমরা সরকার গঠন করি নাই। আমরা এখনো বিরোধী দলেই অবস্থান করছি। আমরা সরকারে নেই। যেসব সহকর্মী ভুল উপলব্ধি করছেন, তাদের বিভিন্ন আচরণের কারণে বিভিন্ন জায়গায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তিকরণে’ বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমি কঠোরভাবে নির্দেশনা দিতে চাই, আপনারা একেকজন বিএনপির প্রতিনিধি। আপনার এলাকায় যেখানে আপনি থাকেন, প্রত্যেকটা মানুষ আপনাকে চেনে বিএনপির একজন নেতা বা কর্মী হিসেবে। আপনি যুবদল, ছাত্রদল  কিংবা তাঁতী দল যা-ই হোক না কেন সবাই আপনাদের চেনে বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে। কেন আপনি এলাকায় এমন কিছু করবেন, যা দ্বারা দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনার এলাকার মানুষ তো আপনারাই আপনজন, আপনার স্বজন। আজকে বিতর্কিত কাজ করে থাকলে কোন মুখে দুই দিন পরে ভোট হলে ভোট চাইতে যাবেন দলের পক্ষে। তখন তো ভোটাররা আপনাকে ইনসাল্ট করবে।’ 

প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন, আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমরা যাদের ভাবতাম, তারা মাঠে নেই বা মাঠে দুর্বল, আল্লাহর ওয়াস্তে এ কথা মন থেকে সরিয়ে দিন। আমর ৩৫ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বুঝি, আগামী নির্বাচন কিন্তু অনেক কঠিন হবে যেকোনো নির্বাচন থেকে। যদি আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মাঠে থাকত বা থাকতে পারত, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন যতটা কঠিন হতো, তার চেয়েও আগামী নির্বাচন আরও কঠিন হবে। এখানে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে, অনেক অদৃশ্য শক্তি আপনার বিরুদ্ধে কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, আপনি যেহেতু এ দলের প্রতিনিধি, আপনার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র কাজ করছে। একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন। আপনি ছাত্রদল, যুবদল, মহিলাদল কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দল, যা-ই হোন না কেন, আল্লাহর ওয়াস্তে এটা একটু চিন্তা করুন যে, বহু ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রকে যদি উপড়ে ফেলতে হয়, এ ষড়যন্ত্রকে যদি উপড়ে আসতে হয় আমাদের ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। আমাদের ধৈর্যশীল হতে হবে, আমাদের আচরণ সে রকম হতে হবে।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা ক্ষমতায় যাবেন না। আপনারা মানুষের সমর্থন পেলে দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবেন। মানুষ আপনাদের ক্ষমতা দেবে না, দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে। দুইটার মধ্যে পার্থক্য আছে। ক্ষমতায় ছিল পলাতক স্বৈরাচার। ক্ষমতা ছাড়া কিছু বুঝত না বলেই দেশের মানুষের জন্য কোনো কাজ করেনি। ওরা ক্ষমতায় ছিল, জনসমর্থনে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়নি। ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় ছিল। আমরা দেশ পরিচালনার সুযোগ পেতে চাই জনগণের সমর্থন নিয়ে।’ 

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশ পরিচালনা করতে হলে নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। দলের প্রতি মানুষের সমর্থন ও আস্থা অর্জন করতে হবে। আস্থা অর্জন করতে হলে নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। বিএনপির প্রতি মানুষের যে আস্থা আছে তা ধরে রাখতে হবে। আস্থা ধরে রাখতে না পারলে ভোট পাবেন না।’

তিনি বলেন, ‘অতীতে আমরা শুনেছিলাম, একটি দলের একজন নেতা ভারত থেকে এসে বলেছিলেন, তারা তাদের (ভারতকে) রিকোয়েস্ট করে এসেছে, যেকোনো মূল্যে তাদের ক্ষমতায় রাখতে হবে। আমরা বিএনপি, আমরা এসব বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ। সেই জনগণের সমর্থন নিয়েই আমরা দেশ পরিচালনা করতে চাই। আমরা জনগণের কাছে যেতে চাই, জনগণের দুয়ারে যেতে চাই, জনগণকে বলতে চাই- দয়া করে আমাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দিন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ডামি ও নিশি রাতের নির্বাচনে বিশ্বাস করি না। আমার ব্যালট চুরির নির্বাচনে বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের ভোটের। আমরা সেই নির্বাচনে বিশ্বাস করি, যেখানে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে স্বচ্ছভাবে, স্বাধীনভাবে ভয়হীনভাবে ভোট দেবে, আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি। সেটি অর্জন করতে হলে দলের নেতাকর্মীদের চলাফেরায় অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হবে। আপনাদের অনেক কিছুর পরিবর্তন করতে হবে। বারে বারে আমি বলছি, জনগণকে সাথে রাখুন, জগনের সঙ্গী হোন।’ 

৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার নিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘৩১ দফা ২৭ দফা ছিল। পরে সেটা ৩১ দফা হয়েছে। পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত যতগুলো দল ছিল সব দলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা এই ৩১ দফা দিয়েছি। তাহলে আমরা বলতে পারি, এটি বাংলাদেশের কমবেশি প্রায় সব ডেমোক্রেটিক দলের সংবলিত প্রস্তাবনা। যার ভেতরে কমবেশি মোটামুটিভাবে আগামী দিনের দেশ পরিচালনা, দেশের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সব কিছু কমবেশি ভাবে আছে।’ 

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১০ সাংগঠনিক জেলা থেকে ৮৫৯ জন উপস্থিত ছিলেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত তারেক রহমানকে তারা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তিনি সেগুলোর জবাব দেন। 

এক প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেন, ‘দুর্নীতির মাধ্যমে ১৫ বছরে আমাদের দেশের ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হয়ে গেছে। ১৫ দিনের মধ্যেই তা আবিষ্কার করতে পেরেছে। এর মানে ভেতরে আরও অনেক কিছু আছে। যদি ভেতরে আরও গভীরভাবে...তাহলে দেখা যাবে দেশের কয়েক বছরের বাজেটের টাকার সমান চলে গেছে। পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। মানি লন্ডারিংয়ের টাকা আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে একটা সামঞ্জস্যের মাধ্যমে দেশের টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লোকাল ফোরামের মাধ্যমে কথাবার্তা শুরু করেছে। আমরা দেখব, অবজারভ করব, তারা সেটা কতটুকু করতে পারেন। যদি পারেন তাহলে ভালো, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাব। আর কি পারেন সেটা দেখে জনগণ যদি আমাদের ভোট দিয়ে দেশ সেবার সুযোগ দেন; তাহলে বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বন্দোবস্ত করেই ছাড়ব।’

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘অবশ্যই আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামের সহযোগিতা নেব। তবে এর বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে যে প্রাইভেট সংস্থাগুলো আছে; তাদের সাথে আমরা কথা বলব। আমাদের দেশের সম্পদ (পাচার হওয়া টাকা) দেশের মানুষের সম্পদ যে এনে দিতে পারবে; আমরা তার সাথেই কথা বলব-বসব।’

বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, ড. মওদুদ আলমগীর পাবেল এবং দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।