সিয়াম ইসলাম প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০১:১০ এএম
এক সময়ের স্বচ্ছল গরু ব্যবসায়ী মো. ছলেমান (৬৫)। তার ছিল দোতলা বাড়ি। সংসারে রয়েছে স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠিত সন্তান-সন্ততি। কিন্তু ছেলে ও স্ত্রীর প্রতারণার শিকার হয়ে এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব তিনি।
জমিজমা বাড়িঘর সব হারিয়ে এখন পথে পথে ঘুরে বেড়ান ছলেমান। অবশেষে অসুস্থ হয়ে ঠাঁই পেয়েছেন সরকারি হাসপাতালে।
গত এক মাস ধরে হাসপাতালে দিন কাটছে বৃদ্ধ ছলেমানের। তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের মহম্মদপুর গ্রামের মৃত খেদু বিশ্বাসের ছেলে।ছলেমান বলেন, আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে সুমন লেখাপড়া শেষে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে বড় পদে চাকরি করে। ছোট ছেলে রিপন গ্রামে কৃষিকাজ করে। বড় ছেলের সঙ্গে ঢাকায় থাকে আমার স্ত্রী ইশারন নেছা। বছর খানেক আগে আমার ব্রেইন স্ট্রোক হয়। আমাকেও আমার বড় ছেলে ঢাকায় নিয়ে যায়। কয়েকমাস পর অপারেশন করার কথা বলে ডাক্তারখানায় নিয়ে যায়। সেখানে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করায়ে নেয় বড় ছেলে সুমন ও আমার স্ত্রী। তারপর আমার চিকিৎসা করায়।
তিন মাস ঢাকায় থাকার পর আমাকে আবার ছোট ছেলে রিপনের কাছে গ্রামে রেখে যায়। কিছুদিন পর আমার ছোট ছেলে জানতে পারে এলাকায় আমার ১৩ শতক জমি, দুই তলা ঘরসহ সব সম্পত্তি বড় ছেলে লিখে নিয়েছে। পরে বড় ছেলে নিজেও রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার কথা স্বীকার করে এবং আমাকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে। আমি বাড়ি ছাড়তে না চাইলে ঢাকায় থেকে বাড়ি এসে আমাকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। আমি নিরুপায় হয়ে বেশ কয়েকদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছি। ভিক্ষাও করতে হয়েছে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়ে দেন। একমাস যাবৎ আমি গাংনী হাসপাতালের বেডে পড়ে আছি। এ পর্যন্ত স্ত্রী-সন্তান আমার কোনো খোঁজ নেয়নি। হাসপাতালের খাবার খাই আর বেডে শুয়ে থাকি। ডাক্তার আসে, ছুটি দেয়। আমি আবার ভর্তি হই। এভাবেই এক মাস হাসপাতালেই দিন যাপন করছি।
ছলেমানের ছোট ছেলে রিপন আলী বলেন, আমি আমার বাবাকে আমার কাছে রাখতে চাই। কিন্তু তিনি আমার কাছে থাকতে চান না। জমি ও বাড়ি লিখে নেওয়ার কারণে আমার বাবা পাগল প্রায়। আমি আমার বড় ভাই সুমনের বিচার দাবি করছি।
পার্শ্ববর্তী গ্রামের সমাজ সেবক ও সাংবাদিক জুলফিকার আলী বলেন, ছলেমান যখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছে, তখন তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি অমানবিক। এখন সে হাসপাতালে ঠাঁই নিয়েছে। প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। যে বাবা-মা সন্তানকে বড় করেছে, লেখাপড়া শিখিয়েছে। সেই বাবা আজ বাড়িতে আশ্রয় না পেয়ে পথে পথে ঘুরছে।
ছলেমানের বড় ছেলে সুমন ও তার স্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মটমুড়া ইউপি সদস্য পলিয়ারা খাতুন বলেন, ছলেমান এক সময় গরু বেচা-কেনা করে ভালো টাকা আয় করতো। এখন সে প্যারালাইজড রোগী। তাকে তার স্ত্রী ও বড় ছেলের শাস্তি হওয়া দরকার।
মটমুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ বলেন, ছলেমানের সঙ্গে তার ছেলে ও স্ত্রী যা করেছে তা একজন মানুষ করতে পারে না। সুমন ও তার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। যোগাযোগ করতে পারলে ছলেমানকে বাড়িতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করব।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু বলেন, বৃদ্ধ ছলেমান অসুস্থ হয়ে রাস্তার পাশে পড়েছিল। আমি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। এখনও আমি তাকে নিয়মিত দেখাশোনা করছি। তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী বলেন, একমাস হলো ছলেমান নামের এক ব্যক্তিকে পুরুষ ওয়ার্ডের ৫নং বেডে ভর্তি রেখেছি। এখন সে কিছুটা সুস্থ। তবে এ মুহূর্তে পরিবারের কেউ তার পাশে আসেনি।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা বলেন, আমি ছুটিতে আছি। বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষয়টি খুবই অমানবিক। আমি এসে বিষয়টি দেখব।