সিয়াম ইসলাম প্রকাশিত: ১৫ মার্চ, ২০২৫, ০৪:৪০ এএম
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গেল কিছু দিনে কোথাও বলার মতো তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এমনকি কমেছে চুরি-ছিনতাই ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত। অপরাধীরা এখন আর এলাকায় নেই বলে দাবি পুলিশের। স্থানীয়রাও বলছেন, যৌথবাহিনীর অভিযান শুরুর পর ভয়ে সব পালিয়েছে।
মোহাম্মদপুর বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখা যায়, গত কিছু দিনে আগের মতো তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ বলছে- গত কয়েকদিন ধরে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে, মামলাও অনেকটা কমে এসেছে। গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১টায় মোহাম্মদপুর-বসিলা চাঁদ উদ্যান ৬ নম্বর রোডে যৌথবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে দুইজন নিহত হওয়ায় এলাকাজুড়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বলে জানা যায়।
স্থানীয়রা জানান, সেদিনের ঘটনার পর এলাকায় অলিগলিতে আড্ডা কমে গেছে। আমরা চাই প্রশাসনের করা ভূমিকা থাকবে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় যেন মগের মুল্লুক হয়ে গিয়েছিল, যে যেভাবে পারছে চুরি ছিনতাই করছিল তবে যৌথবাহিনীর অভিযানে সেদিন গোলাগুলিতে দুজন নিহত হলে এখন মোহাম্মদপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের আতঙ্কটা কমে এসেছে। আমরাও চাই এভাবেই চলুক কেউ চায় না একটি সুন্দর এলাকা এভাবে অরাজকতা বিরাজ করুক।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌথবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে দুই অস্ত্রধারীর মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ৪৬ পদাতিক ব্রিগেডের ২৩ ইস্ট বেঙ্গল পদাতিক ব্যাটেলিয়ানের এক কর্মকর্তা।
বর্তমানে মোহাম্মদপুর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক ও অপরাধীদের নজরে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। কোনো অপরাধীকে আর ছাড় দেওয়া হবে না। কে কোন দল করে তাও দেখা হবে না, যেখানেই আইনের অবনতি হবে সেখানেই প্রতিরোধ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যৌথবাহিনী।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান বলেন, বর্তমানে মোহাম্মদপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আগের থেকে এখন পর্যন্ত মামলার রেকর্ড কম, পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে দিতে কাজ করছেন। তবে গতকাল অন্য এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, সেটি অনেকেই মোহাম্মদপুর বলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। আসলে ঘটনাটি ঘটেছে আদাবর থানা এলাকায়।
ওসি ইফতেখার আরও বলেন, আমরা আর এই এলাকায় অপরাধ দেখতে চাই না। যে দলেরই অপরাধী চিহ্নিত হবে এক বিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন পুলিশের পাশাপাশি যৌথবাহিনীও মাঠে রয়েছে। কে কোন দল করে এখন আর দেখার সময় নাই। যেখানেই অপরাধ সংঘটিত হবে সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে। আইননুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ওসি তদন্ত হাফিজুর রহমান বলেন, আর কোনো অপরাধীকে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না। ১৯ ফেব্রুয়ারির পর থেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলায় রয়েছে। নিয়মিত পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে অপরাধ যেমন কমেছে মামলাও কমতে শুরু করেছে।
মোহাম্মদপুর এলাকায় সবচেয়ে ক্রাইম জোন উল্লেখিত এলাকাগুলো হচ্ছে বসিলা, ৪০ ফিট, লাউতলা, বেড়িবাঁধ বোডগাট, চাঁদ উদ্যান, নবীগর হাউজিং, ঢাকা উদ্যান, নবোদয় হাউজিং ও রায়েরবাজার। এ-সব এলাকায় গত কয়েকদিন আগেও সরকারি কর্মচারী সহ বেশ কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়, কিশোর গ্যাং দের আধিপত্য বিস্তার।
এসব বিষয় অনেকে মামলা করলেও কেউ আবার ভয়ে থানা-পুলিশ করতে চায় না। তবে এখন পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা রয়েছে এলাকাটিতে।
২২, ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে ঘুরে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এলাকাবাসীর দাবি- গত ১৯ ফেব্রুয়ারি যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান এবং গোলাগুলিতে দুইজন অপরাধী নিহত হওয়ায় এখন পর্যন্ত তেমন কোনো চুরি ছিনতাই কিশোর গ্যাংয়ের ঘটনা ঘটে নাই। তবে পুলিশ যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রাখা প্রয়োজন আছে, অপরাধীরা যে কোন মুহূর্তে সংগঠিত হতে পারে। এই সব এলাকায় প্রতিটি আলাদা করে ৫০ থেকে ৬০ জনের একেকটি গ্রুপ রয়েছে। এরা এখন এলাকায় নেই বর্তমানে শান্তি-শৃঙ্খলা রয়েছে।
এ বিষয় প্রবীণ এক আইনজীবী বলেন, মোহাম্মদপুর এলাকাটিতে অপরাধ প্রবণতা বেশি হয়। এর কারণ হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের হাতে সোপর্দ করলেও অতি দ্রুত আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায় তারা। তখন মামলা চালাতে আরও অপরাধের সাথে জড়িয়ে পরে।
একেক জন অপরাধীর মিনিমাম ৮ থেকে ১০টি করে মামলা রয়েছে। তার মতে অপরাধীকে দ্রুত আইনে বিচার করলে হয়তো সাজা হবে অথবা খালাস পাবে। এমন কিছু যদি করা যায় তাহলে অপরাধ হ্রাস পাবে। তবে যৌথবাহিনীর অভিযানে মোহাম্মদপুর এলাকায় অপরাধ হ্রাস পেয়েছে বলে আমি মনে করি।