সিয়াম ইসলাম প্রকাশিত: ০৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:৪০ এএম
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহম্মদ ইউনূস মনে করেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে আরও বেশি চীনা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন এবং স্থানীয় অংশীদারদের সাথে মিলিত হয়ে এই অঞ্চলে একটি বিশাল বাজার তৈরি করতে উৎসাহিত হবেন।
বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সফরে বেইজিংয়ে অবস্থান করছেন ড. মুহম্মদ ইউনূস। সেখানে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়াকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "আমরা চীনকে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করি। গত কয়েক বছরে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে, বাণিজ্য শক্তিশালী হয়েছে এবং চীনের সহযোগিতায় আমরা উপকৃত হয়েছি। চীনের সাফল্য বাংলাদেশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে।"
ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ তত্ত্বের উদ্ভাবন এবং সফল প্রয়োগের জন্য ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস, চীনের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিরও প্রশংসা করেন। সিনহুয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "বিশ্বের অধিকাংশ দেশ উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে জিডিপি বা প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতিকে বিবেচনা করে। কিন্তু চীন নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছে। এ কারণেই চীন দ্রুতগতিতে এবং ব্যাপক সাফল্যের সাথে দারিদ্র্য কমাতে সক্ষম হয়েছে।"
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। টানা ১৫ বছর ধরে চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১০,০০০ চীনা উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিচালনা করছে, যেখানে সাড়ে ৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত।
ড. ইউনূস আরও বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা ক্রমশ বাড়ছে এবং এর ইতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
তিনি সিনহুয়াকে বলেন, "বাংলাদেশ চীনে রপ্তানির পরিমাণ বাড়াচ্ছে। বর্তমানে শিল্পখাতের কাঁচামাল এবং প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছে।"
সম্প্রতি, বাংলাদেশ থেকে রোগী, চিকিৎসক এবং ট্রাভেল এজেন্সি কর্মকর্তাদের একটি দল চীনের কুনমিং সফর করেছে। সেখানে রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছেন এবং চিকিৎসক ও ট্রাভেল এজেন্টরা সেখানকার চিকিৎসা পরিষেবার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল, ভবিষ্যতে চীনে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা পর্যটন বৃদ্ধির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা।
ড. ইউনূস মনে করেন, একটি আধুনিক ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের অনেক কিছু শেখার আছে।
সপ্তম শতাব্দীতে বিখ্যাত চীনা সন্ন্যাসী হিউয়েন সাং এবং দশম শতাব্দীতে বাঙালি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী অতীশ দীপঙ্করের চীন সফরের কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং এর ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত।
তিনি আরও বলেন, "চীনের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ উপকৃত হয়েছে। আমরা শুধু দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতিই নয়, এমন একটি অর্থনীতি তৈরি করতে পারি যেখানে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। আমরা এই সম্পর্ককে আরও উন্নত স্তরে নিয়ে যেতে পারি, যেখানে সহযোগিতা শুধু অর্থনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানও ঘটবে। আমরা ইতোমধ্যে বন্ধুত্বের ৫০ বছর পার করেছি এবং আশা করি, আগামী ৫০ বছর আরও ফলপ্রসূ হবে।"