Dhaka, মঙ্গলবার, এপ্রিল ৮, ২০২৫
logo

৮ থেকে ১৪ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ


সিয়াম ইসলাম   প্রকাশিত:  ০৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:২৪ এএম

৮ থেকে ১৪ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ

সরকার ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন করবে। এই সময়ে, জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ করা, অবৈধ জাল তৈরি রোধ, পাচার রোধ এবং অবৈধ পরিবহন ও মজুতদারি রোধের জন্য কাজ করবে সরকার।

সোমবার (৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে 'জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ - ২০২৫' উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এই তথ্য জানান।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশকে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায়, ৮ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন করা হবে।

তিনি বলেন, এই বছরের জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, 'জাটকা ধরা বন্ধ হলে, ইলিশ উঠবে জাল ভরে'। জাটকা হলো ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সেন্টিমিটারের ছোট আকারের ইলিশ। ১ কেজি ওজনের ইলিশ কমপক্ষে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার এবং ২ কেজির বেশি হলে ৬০-৬২ সেন্টিমিটার হবে। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মাধ্যমে জাটকাকে ইলিশে রূপান্তর করা হবে।

মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে ৫ লাখ ২৯ হাজার টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। দেশজ জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশের বেশি। বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি আহরিত হয় এ দেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে।

ফরিদা আখতার বলেন, এ দেশের প্রায় ৬ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০-২৫ লাখ লোক ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই ইলিশ সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষের হাতের নাগালে ইলিশ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে।

উপদেষ্টা দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, জাটকা আহরণ, ক্রয়-বিক্রয় এবং খাওয়া থেকে বিরত থেকে জাতীয় মাছ ইলিশের উন্নয়নে এগিয়ে আসবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ সফল ও স্বার্থক হয়ে উঠবে এটাই আমার প্রত্যাশা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার দেশের ইলিশ সমৃদ্ধ ২০টি জেলায় (ঢাকা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, সিরাগঞ্জ) 'জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ২০২৫' উদযাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে সাত দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় এবং মাঠ পর্যায়ে অর্থাৎ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে উপযোগী কর্মসূচি পালিত হবে। এ বছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠান আগামী ৮ এপ্রিল বরিশাল বিভাগের ইলিশ সমৃদ্ধ অন্যতম জেলা বরিশাল জেলার সদর উপজেলার বেলস্ পার্কে অনুষ্ঠিত হবে এবং বরিশাল সদর উপজেলার ডিসি ঘাট সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে নৌ র‍্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

ইলিশ সম্পদ রক্ষা ও উন্নয়নে সরকার যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা হলো:

  • জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণার নানারকম উদ্যোগ গ্রহণ; এর আওতায় প্রতি বছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন করা হয়ে থাকে।
  • ইলিশের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় নির্ধারণ করে মা ইলিশ আহরণের নিষিদ্ধ সময় ২২ দিন করা হয়েছে।
  • ইলিশের পোনা জাটকা যেন নিরাপদে বৃদ্ধি লাভ করতে পারে তাই ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী জাটকা ধরা, পরিবহন, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
  • দেশের ইলিশ সমৃদ্ধ প্রধান প্রধান নদ-নদীতে ৬টি ইলিশ অভয়াশ্রম স্থাপন করা হয়েছে এবং এসব অভয়াশ্রমে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়।
  • মা ইলিশ এবং জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের জীবনধারণের জন্য প্রতিবছর ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে এবং জাটকা আহরণে বিরত অতি দরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে চাহিদামাফিক নানা প্রকার উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।
  • ইলিশসহ উপকূলীয় অন্যান্য মৎস্য প্রজাতি ও জলজ জীব রক্ষায় ২০১৯ সালে নিঝুম দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিমি আয়তনের সামুদ্রিক সংরক্ষিত (MPA) অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।
  • জেলে ও মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে 'সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
  • মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন যুগোপযোগী করার নিমিত্ত সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
  • ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে 'ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প' বাস্তবায়ন করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
  • মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় দুটি দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে মোট ১১ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।