নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ড. ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক
এস আলম পরিবারের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশ
নোয়াখালীতে সেনাবাহিনীর ভুয়া ক্যাপ্টেনসহ আটক ২
কুমিল্লা জেলাধীন দাউদকান্দি মডেল থানাধীন পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে আনিসুর রহমান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত আনিসুর রহমান একই এলাকার ছালামত এর ছেলে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, বালু ভরাটের জন্য জায়গার মালিক আবুল কাশেম এবং তার ছেলে মহন সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বাঁশ দিয়ে বেড়াজাল দিয়ে রেখেছেন, যাতে বালু অন্যত্র ছড়িয়ে না যায়। বর্তমানে জায়গাটি বালু ভরাট বিহীন অবস্থায় পরে আছে।
জমির মালিক আবুল কাশেম ও তার পুত্র মহন জানান, আমরা আমাদের নিজস্ব জমিতে বালু ভরাট করতে গেলে একই এলাকার ছালামতের ছেলে আনিসুর রহমান বালু ভরাটে বাঁধা দেয়। কোনো কারণ ছাড়া ড্রেজার তুলে বালু ভরাট বন্ধ করে দেয়। পরে ড্রেজার বন্ধের কারণ জানতে চাইলে আনিস বিভিন্নভাবে আকারঈঙ্গিতে তাকে কিছু খরচাপাতি দেওয়ার কথা বলেন। খরচাপাতি কত দিতে হবে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আনিসুর রহমান ৫লাখ টাকা দাবি করেন।
জমি মালিক আবুল কাশেমের ছেলে মহন বলেন, আনিসুর রহমান একজন দুষ্ট প্রকৃতির লোক। তার নামে থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। মাদক ব্যবসা, গরু চুরি, চাঁদাবাজি এবং জুয়া খেলাসহ বিভিন্ন অপকর্মে তিনি জড়িত।
একই এলাকার স্কুল শিক্ষক শরীফুল ইসলাম বলেন, আনিস আমার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। গত ১০ বছর আগে এই আনিসের কিছুই ছিলোনা, এখন সে কোটিপতি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে সে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বিভিন্ন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ অবৈধ মাদক ব্যবসা করে আসছেন। সে একজন জুয়ারী, জুয়া খেলে সমাজ এবং এলাকার ছেলেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছেন।
আনিসুর রহমানের বিষয়ে জানতে সরেজমিনে তার গ্রামে পাড়া প্রতিবেশীর নিকট খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, আনিসের বাসার চারপাশের সবার সাথেই তার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ রয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্থানীয় এক আওয়ামী নেতার ছত্রছাড়ায় আনিস বিভিন্নভাবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছে। যার থেকে তার প্রতিবেশীদের সাথে শত্রুতার শুরু হয়। তার সম্পর্কে প্রতিবেশীরা কেউই ভালো রিপোর্ট দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার একাধিক প্রতিবেশী জানান, আনিস মাদক ব্যবসা করে এবং জুয়া খেলে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। কিছুদিন আগেও ৫০লাখ টাকার জমি ক্রয় করেছেন। তার বৈধ কোনো আয়ের উৎস নেই। সে একটা মুদি দোকানদার, গ্রামে মুদি দোকান দিয়ে এতো টাকা আয় করা কখনোই সম্ভব না।
স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে আনিস একজন পেশাদার জুয়ারী। তার জুয়া খেলা সংক্রান্ত একটি ভিডিও এবং কয়েকটি অভিও ক্লিপ এসেছে এই প্রতিবেদকের কাছে। রাতের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন লোক একজায়গায় হৈহুল্লোর করছে। ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, আমি ডেইলি খেলমু, জুয়া আমি ডেইলি খেলমু, কথাটি কয়েকবার বলছেন। ঐ ব্যক্তির নাম-পরিচয় না পাওয়া গেলেও জানা যায়, ঐ ব্যক্তি আনিসের সাথের একজন জুয়ারী। তারা একত্রে জুয়া খেলেন।
একই ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, অন্য আমি ডেইলি খেলমু বলা ব্যক্তি এসে আনিসকে বলে তুই চুপ কর, তুই চুপ কর, একদম চুপ। তুই ৫হাজার টাকা দে, আমি ওদেরকে দিয়ে দেই। ওরা আর এই বিষয়ে (জুয়ার) বাড়াবাড়ি করবেনা। তখন আনিসকে টাকা গুনতে দেখা যায় এবং ঐ ব্যক্তির হাতে দিতে দেখা যায়।
আনিসুর রহমানের বউয়ের সাক্ষাৎকার নেয় এই প্রতিবেদক। সাক্ষাৎকারের মাঝে তার স্বামীর জুয়া খেলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করেন, তার স্বামী আনিসুর রহমান একজন জুয়ারী, জুয়া খেলেন। পরে সে কথাটি তিনি ঘুরিয়ে নিয়ে অন্যভাবে বলেন, আগে জুয়া খেলতো, এখন খেলেনা। সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপ এই প্রতিবেদকের সংগ্রহে আছে।
আনিসের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ বালু ভরাট বন্ধ ও চাঁদা দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে আনিস বলেন, আমি কেন চাঁদা চাইতে যাবো? আমি দোকান করে খাই। আমার সাথে তাদের পূর্বশত্রুতা থাকায় তারা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। আমি একটু ভাল আছি এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। এইতো কিছুদিন আগেও ৩৪লাখ টাকার জমি রাখছি। একারণে সবার শত্রু হয়ে গেছি। তাহলে বালু কে বন্ধ করলো, প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে আনিস কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
স্থানীয় একাধিক সাবেক এবং বর্তমান মেম্বার জানান, আনিসকে বহুবার জুয়ার আসর থেকে ধরেছেন তারা। কতবার ধরেছেন তার নির্দিষ্ট কোনো হিসাব নাই। সর্বশেষ একবার ১৯হাজার টাকাসহ ধরেন এবং স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে সালিশের মাধ্যমে ২০হাজার টাকা জরিমানা করেন। আর কখনো জুয়া খেলবেন না এবং খেললে ১লাখ টাকা জরিমানা শর্তে মুচলেকা দেন আনিস।
দাউদকান্দি মডেল থানায় গিয়ে জানা যায়, আনিসুরের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে। যার তিনটি অভিযোগ গত ২৩ সেপ্টেম্বর করেছে ভুক্তভোগীরা। এই প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি তদন্ত মো. শহিদুল্লাহ প্রধান।