এই সময়ের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া, চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ী সব নারীদের পছন্দের বাহনের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে দুই চাকার বাহন স্কুটি। তবে শহরাঞ্চলে মেয়েদের স্কুটি চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর দৃশ্য প্রায় চোখে পড়লে গ্রামাঞ্চলে বিরল। কিন্তু থেমে নেই তারাও, অন্যদের দেখাদেখিতে স্কুটি চালানোর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে উপজেলা সহ গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের। তেমনি একজন রাঙামাটির কাপ্তাই শিল্প এলাকার বাসিন্দা তরুণী জেমিয়া ফারজানা নিতু। যিনি ইতোমধ্যে উপজেলায় প্রথম লেডি বাইকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। রাঙামাটি সরকারি কলেজ থেকে অনার্স পাশ করা এই তরুণী শখের বসে স্কুটি চালানো শিখেছিলেন। এখন অন্য নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আয়ের পাশাপাশি স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করছেন। নিতু বলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি ভ্রমণপ্রেমী মানুষ। স্বপ্ন দেখতেন কলেজে ভর্তির পর স্কুটি কিনবেন এবং সেটা চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা ভ্রমণ করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। ২০০৭ সালে অনেকটা শখের বসে চাচার কাছ থেকে স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর নিজের কিছু জমানো টাকা ও পরিবারের সহযোগিতায় একটি স্কুটি কিনেন। প্রথম প্রথম একজন নারী রাস্তায় স্কুটি চালাচ্ছি, সেটা দেখার পর এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সবাই তাকিয়ে থাকতো এবং কানে বাজতো দেখ দেখ মেয়ে স্কুটার(স্কুটি) চালাচ্ছে। তবে এখন দিন বদলেছে, বর্তমানে আমাকে দেখে অনেক মহিলাই স্কুটি চালাতে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি বলেন, পরে উপজেলার বিভিন্ন পেশার নারীরা আমার কাছে স্কুটি চালানো শিখতে আগ্রহ প্রকাশ করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘এনকে ট্রাভেল কুইন’ নামে একটি পেজ খুলে সেখানে নারীদের স্কুটি প্রশিক্ষণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করি। এরপর শুরু হয় প্রশিক্ষক হিসেবে আমার যাত্রা। এই নিয়ে গত এক বছরে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পেশার বেশ কয়েকজন নারীকে স্কুটি চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। এতে নিজের আয়ের পাশাপাশি অনেক নারীদের স্কুটি চালানোয় পারদর্শী করে গড়ে তুলছি।
‘বর্তমানে বেশির ভাগ চাকরিজীবী নারী স্কুটি চালানো শিখতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে। ইতিমধ্যে ৭ থেকে ৮ জন মহিলাকে স্কুটি চালানো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এতে বর্তমানে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে চাকরিতে আগ্রহী নই, এই স্কুটি প্রশিক্ষণ দিয়েই ভালো কিছু করার ইচ্ছা রয়েছে আমার— যোগ করেন তিনি’
ছাত্র আন্দোলনে বিরোধিতা করে বয়কটের শিকার ঢাবির ৭৮ শিক্ষক
শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণায় বিশ্ববাজারে কমেছে চালের দাম
শঙ্কায় রয়েছেন আজহারী, ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস
নিতু বলেন, ‘এক সময়ের শখের স্কুটি এখন মেয়েদের খুবই প্রয়োজনীয় বাহন। দৈনন্দিন জীবনে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েদের নিজের একটা বাহন থাকলে সহজে যে কোন জায়গায় যাতায়াত সম্ভব হয়। তাছাড়া চাকরিজীবী নারীদের ক্ষেত্রে সেটি আরও গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে জেমিয়া ফারজানা নিতুর কাছে স্কুটি চালানো প্রশিক্ষণ নেওয়া কয়েকজন নারী জানান, আমাদের আগে থেকেই অনেক ইচ্ছে ছিল স্কুটি প্রশিক্ষণ নেওয়ার কিন্তু কাপ্তাইয়ে এমন কোন সুযোগ বা প্রশিক্ষক ছিল না। বর্তমানে ফারজানা নিতুর প্রশিক্ষণের খবর পেয়ে আমরা তার কাছে স্কুটি চালানো শিখেছি। এখন আমরাও নিজেরা স্কুটি চালানো শিখে রাস্তায় সহজে যাতায়াত করছি। আমাদেরকে স্কুটি চালানো দেখে স্থানীয় অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন। অন্য নারীদের শেখানোর কথা ভাবছি। গণমাধ্যমে দেখি সারাদেশে স্কুটি চালিয়ে অনেক নারী স্বাবলম্বী হচ্ছে।
তাইতো কাপ্তাই উপজেলার আগ্রহী মহিলাদের স্কুটি চালানোয় পারদর্শী করে গড়ে তুলতে তার প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিসরটা আরও সাজাতে চান জেমিয়া ফারজানা নিতু। সে লক্ষ্যে তিনি এখন কাজ করে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি মোঃ নুর নবী