ওবায়দুল ইসলাম রবি রাজশাহী
কুমিল্লা শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুর রউফ চৌধুরী ফারুকের ইন্তেকাল
ফেনীর দাগনভূঞায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু
মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ে নতুন নির্দেশনা
গণঅভ্যূত্থানের আকাক্সক্ষায় গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জোনায়েদ সাকি’র
আজ ২৩ নভেম্বর শনিবার সকাল ১০ টায় রাজশাহী সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে গণসংহতি আন্দোলন রাজশাহী জেলা শাখার আয়োজনে রাজশাহীর গণসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এই গণসংলাপে ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ শীর্ষক গণসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
গণসংহতি আন্দোলন রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জননেতা জোনায়েদ সাকি বলেন Ñ শেখ হাসিনা সরকার লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। তার আমলে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে ভয় আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। একদিকে ত্রাসের রাজত্ব অন্যদিকে জনগণের একটি অংশকে অবৈধ আর্থিক সুবিধা দিয়ে দিয়ে শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছিলো। জনগণের সমস্ত অধিকার ও মর্যাদা কেড়ে নিয়েছিলো। আইনের শাসনকে পদদলিত করে এই রাষ্ট্রে হাসিনা হয়ে উঠেছিলো সর্বেসর্বা। সে আন্দোলনরত হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ‘রাজাকার’ উপাধি দিয়ে ভেবেছে পার পেয়ে যাবে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা শ্লোগানে বলে দেয় তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার।
আমাদের দেশের তরুণরা তাদের মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করে দেখিয়ে দিয়েছে, এই রাষ্ট্র আমরা চাই না। এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা আমরা চাইনা। শিক্ষার্থীরা তাদের আত্মমর্যাদার প্রশ্নে সর্বাত্মক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হাসিনাকে বিদায় করেছে।
জোনায়েদ সাকি বলেন Ñ ২৪ অভ্যূত্থানে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যারা এর সাথে যুক্ত ছিলো সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন যেসব আমলারা এখনো এই ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রশ্রয় দিচ্ছেন আমাদের তরুণরা তাদের ছুড়ে ফেলে দিবে। ফলে সাবধান হয়ে যান। তরুণদের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না।
তিনি বলেন, শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে হবে। ১২ ক্লাস পর্যন্ত সরকারি টাকায় সকল ছাত্র—ছাত্রীদের খরচ বহন করতে হবে। বেকারত্ব নিরসনে শিল্পে ও কৃষিতে বিকাশ ঘটাতে হবে। বাংলাদেশের কোনো জায়গায় আর কোন বৈষম্য দেখতে চাই না।
জোনায়েদ সাকি আরো বলেন Ñ জুলাই আগস্টের গণহত্যায় প্রায় ২ হাজার শহীদের এবং ৩০ হাজার আহত ছাত্র—শ্রমজীবী জনতার এক বিশাল আত্মত্যাগের উপর দাঁড়িয়ে, আর কোনো ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা এদেশে চলবে না। ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপ করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর করতে হবে। কারণ, ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা জিইয়ে রেখে জনগণের কাঙ্ক্ষিত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে যেতে হবে। বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙ্গে সংবিধানকে গণতান্ত্রিক করতে হবে। ৭২ এর সংবিধান একটা ফ্যাসিস্ট সংবিধান, এই সংবিধান দিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। এ সংবিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব না। ৭২ এর সংবিধানকে সংস্কার করতে হবে। নতুন সংবিধান ধর্মীয়, জাতিগত স্বার্থের উর্ধ্বে গিয়ে সকল নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণ করবে। চাকমা— মারমা সবার জন্য সমতা, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার সমান সুযোগ এবং জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই সংবিধানকে রুপান্তর করতে হবে। ৭০ নং অনুচ্ছেদ বাতিল, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। দ্বি—কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, বিচার বিভাগ থেকে নির্বাহী বিভাগকে আলাদা করতে হবে। গণমাধ্যমসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীন করতে হবে। ভোটের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে।
সভাপতিত্বের বক্তব্যে অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ বলেন Ñ ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায়ের জন্য ২৪ অভ্যুত্থানে যেভাবে সকল জনগণ দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছে, ঠিক একইভাবে ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপ ঘটানো জন্য সমস্ত শ্রেণি—পেশার মানুষকে দল—মত নির্বিশেষে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণ যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছে আজ সময় এসেছে সেই আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ বাস্তবায়নের। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের সংস্কার ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা রাজশাহীবাসীর কাছে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে যুক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।
গণসংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু, রাজশাহী জেলা গণসংহতি’র সদস্য সচিব জুয়েল রানা, পবা উপজেলার সংগঠক রন্জু সহ অন্যান্য বিভিন্ন দলীয় নেতৃত্ব। পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি—পেশার প্রতিনিধিদের মধ্যে মতামত প্রদান করেন নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হক, ইতিহাসবিদ মাহবুব সিদ্দিকী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহমুদ জামাল কাদেরী, রাকাব আউটসোর্সিং কর্মচারি কল্যাণ পরিষদের সহ সভাপতি শফিকুল ইসলাম সাজ, সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারি ইউনিয়নের সহ—সভাপতি মইন উদ্দিন আহমেদ, ছাত্র ফেডারেশন রাবি শাখার যগ্ম আহ্বায়ক আযাদ রহমান সহ আরো অন্যান্য স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।