Dhaka, শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪

আকাশকে শান্ত-নিরীহ হিসেবেই জানত এলাকাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৩:৫৪ এএম
Bangla Today News

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবোঝাই এমভি আল-বাখেরা জাহাজে সাতজনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একসময় দরিদ্র গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা আকাশ এখন দেশের আলোচিত এক নাম। র‍্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, জাহাজের মাস্টারকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার নৃশংস পরিকল্পনা। পরে ধরা পড়ার ভয়ে একে একে আরও ছয়জনকে হত্যা করেন তিনি।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর আকাশের মা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। এরপর বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামের দরিদ্র নানা-নানির পরিবারে বেড়ে ওঠেন আকাশ। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি শান্ত ও নিরীহ স্বভাবের একজন যুবক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। নানা-নানির মৃত্যুর পর বড় ভাই বিধান মণ্ডলের সঙ্গেই থাকতেন তিনি। পরে বিধান মণ্ডল ধর্মান্তরিত হন। তার নাম এখন আবির হোসেন। ভাইয়ের পর ২০২০ সালে আকাশ মণ্ডলও ধর্ম পরিবর্তন করে ইরফান নাম রাখেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, আকাশ মণ্ডল অনেক আগেই এলাকা ছেড়েছেন। এখানে থাকা অবস্থায় অভাবের তাড়নায় চুরির মতো ছোটখাটো অপরাধে জড়িয়েছিলেন। পাঁচ-ছয় বছর আগে নারীঘটিত একটি অপবাদ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তবে মানুষ হত্যা করার মতো ঘটনা তার মধ্যে ছিল না।

তাদের প্রতিবেশী জিহাদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে আকাশকে এলাকায় দেখি না। অভাব ও অভিভাবক না থাকায় এলাকায় মাছ-শাক চুরির মতো ঘটনায় এক-দুবার জড়িয়েছে আকাশ। তবে এমন নৃশংস হতে পারে তা মনে হয়নি। সে এলাকায় শান্ত স্বভাবেরই ছিল। মাছ ধরা এবং দিনমজুরির কাজ করতো। বছর চারেক আগে ফকিরহাটের ফলতিতা বাজার এলাকায় সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির একটি ছোট দোকান দিয়েছিল দুই ভাই। তবে ওই দোকান বেশি দিন টেকেনি।

মো. জুয়েল নামে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, নারীঘটিত একটি বিষয় নিয়ে পাঁচ-ছয় বছর আগে এলাকা ছাড়ে আকাশ। এরপর বছর দুই আগে এলাকায় এসে থাকা শুরু করলে ভাইয়ের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় আবারও নিরুদ্দেশ হয়। এরপর আর তাকে দেখিনি। শুনেছি, মাঝে একবার নাকি এসেছিল। নিউজে দেখলাম, জাহাজে সাতজনকে খুন করেছে এই আকাশ। 

আকাশের বড় ভাই আবির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই বছর আগে বাড়ি ছাড়ার পর গত বছর একবার বাড়িতে এক দিনের জন্য এসেছিল। মনকষাকষি হয়েছিল আমার সঙ্গে, তারপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। এলাকা থেকে যাওয়ার পর জাহাজে কাজ নেয়। তারপর একবারই বাড়িতে এসেছে, তাও গত বছরের শীতে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাবার বাড়ি পাশের মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া এলাকায়। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর মা ধর্মান্তরিত হয়ে অন্যত্র চলে যান। পরে ফকিরহাটের মূলঘর এলাকায় সরকারি জায়গায় ঘর বেঁধে নানা-নানির সঙ্গে থাকতাম। নানা-নানি মারা যাওয়ার পর এখানেই আছি।

আকাশ বিয়ে করেছে কি না সে বিষয়েও জানা নেই উল্লেখ করে আবির হোসেন বলেন, এলাকায় থাকতে তো বিয়ে করেনি। জাহাজে জাহাজে থাকতো, এটাই জানতাম। আর আমাদের কারও সঙ্গেই কোনো কথা হতো না। টিভিতে দেখে লোকে বলছে। প্রথমে তো বিশ্বাস করিনি। পরে দেখি আকাশকেই দেখাচ্ছে। সে যদি ওই ঘটনা ঘটায়, তবে তার শাস্তি হোক।

জাহাজে এই ঘটনার পর আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান বাড়িতে কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করেননি বলে দাবি তার ভাইয়ের। এলাকায়ও কেউ তাকে এক বছরের মধ্যে দেখেনি বলে জানান।

নৃশংস সাত খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানের বিরুদ্ধে স্থানীয় পুলিশের কাছেও কোনো অভিযোগ নেই। ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবোঝাই জাহাজে সাতজনকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানের নামে আমাদের থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ নেই।

Leave a comment