Dhaka, শুক্রবার, জানুয়ারী ১০, ২০২৫

সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ গ্রহণ নিয়ে ইসলামে যা বলা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০:৪১ পিএম
Bangla Today News

ইসলামী শরীয়তে সুদ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং ভয়াবহ একটি গুনাহ হিসেবে বিবেচিত। কোরআন ও হাদিসে সুদের ভয়াবহতা এবং এ থেকে বিরত থাকার জন্য দৃঢ় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ সুদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এটি গ্রহণ করা ইসলামি শরীয়তে জায়েজ নয়। এই বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো।

আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজীদে ইরশাদ করেন—

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللهِ وَرَسُولِهِ

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা বাকি আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। আর যদি তোমরা তা না কর, তাহলে আল্লাহ ও তার রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৭৮-২৭৯)

এখানে সুদ পরিহারের জন্য কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন—

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَس

যারা সুদ খায়, তারা (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ সম্পর্কে বলেছেন—

اجْتَنِبُوا السّبْعَ المُوبِقَاتِ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا هُنّ؟ قَالَ: الشّرْكُ بِاللهِ، وَالسّحْرُ، وَقَتْلُ النّفْسِ الّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلّا بِالحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا

সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, সেগুলো কী? তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, জাদু করা, অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা, এবং সুদ খাওয়া।(সহীহ বুখারি ও মুসলিম)

অন্য এক হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন—

رَأَيْتُ اللَّيْلَةَ رَجُلَيْنِ أَتَيَانِي، فَأَخْرَجَانِي إِلَى أَرْضٍ مُقَدَّسَةٍ، فَانْطَلَقْنَا حَتَّى أَتَيْنَا عَلَى نَهَرٍ مِنْ دَمٍ فِيهِ رَجُلٌ قَائِمٌ وَعَلَى وَسَطِ النَّهَرِ رَجُلٌ بَيْنَ يَدَيْهِ حِجَارَةٌ، فَأَقْبَلَ الرَّجُلُ الَّذِي فِي النَّهَرِ، فَإِذَا أَرَادَ الرَّجُلُ أَنْ يَخْرُجَ رَمَى الرَّجُلُ بِحَجَرٍ فِي فِيهِ، فَرَدَّهُ حَيْثُ كَانَ، فَجَعَلَ كُلَّمَا جَاءَ لِيَخْرُجَ رَمَى فِي فِيهِ بِحَجَرٍ، فَيَرْجِعُ كَمَا كَانَ، فَقُلْتُ مَا هَذَا؟ فَقَالَ: الَّذِي رَأَيْتَهُ فِي النَّهَرِ آكِلُ الرِّبَا.

আমি স্বপ্নে দেখলাম, এক ব্যক্তি রক্তের নদীতে দাঁড়িয়ে আছে। যখনই সে নদী থেকে বের হতে চায়, নদীর তীরের এক ব্যক্তি তার মুখে পাথর ছুড়ে তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এই ব্যক্তিটি হল সুদখোর। (সহিহ বুখারি)

সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ কেন সুদ?

সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সরকার নির্দিষ্ট একটি মেয়াদে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং এর বিপরীতে একটি নির্ধারিত লভ্যাংশ প্রদান করে। এই লভ্যাংশ মূলত বিনিয়োগের উপর সুদের ভিত্তিতে নির্ধারিত। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের উপর অতিরিক্ত মুনাফা পান, যা ইসলামি শরীয়তে সুদ হিসেবেই গণ্য হয়।

সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ কেন গ্রহণযোগ্য নয়?

  •  সঞ্চয়পত্রের মেয়াদে বিনিয়োগকারী মূলধন ফেরত পান না। বরং নির্ধারিত হারে লভ্যাংশ পান।
  • এই লভ্যাংশ কোনো উপঢৌকন নয়, বরং মূলত সুদ।
  • ইসলামী শরীয়ত সুদ গ্রহণ ও প্রদানে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ইসলামের আহ্বান

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সুদ থেকে বিরত থাকতে আদেশ করেছেন এবং সুদ গ্রহণকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ
 

আল্লাহ তার লানত দিয়েছেন সুদ গ্রহণকারী, সুদ প্রদানকারী, সুদের দলিল লেখক এবং সাক্ষীদের উপর। (সহিহ মুসলিম)

সমাধান

যারা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের উচিত দ্রুত সুদ থেকে মুক্ত হওয়া এবং এই অর্থ কোনো দাতব্য কাজে ব্যয় করা, যাতে এটি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার না হয়।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুদ এবং সকল প্রকার হারাম কাজ থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন। আমীন।

Leave a comment