মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় বরাইদ ইউনিয়নের গোপালপুর বাজার। দেশের অন্যতম দুধের বাজার হিসেবে খ্যাতি রয়েছে বাজারটির। এখানকার দুধের গুণগত মান ভালো হওয়ায় পাইকাররা খামারিদের কাছ থেকে সরাসরি দুধ কিনে থাকেন। ধলেশ্বরী নীদের পূর্বপাড়ে গোপালপুর বাজারে প্রতিদিন শত শত মণ দুধ বিক্রি হয়ে থাকে। এক ঘণ্টার দুধের বাজার নামে পরিচিতি পাওয়া এই বাজারে দৈনিক বিক্রি হয় ২৫০ মণ থেকে ৩০০ মণ দুধ।
জেলার সাটুরিয়া ও দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে কৃষি কাজের পাশাপাশি এই অঞ্চলের কৃষকরা গবাদি পশু পালন করেও আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন। দুটি উপজেলার কৃষকেরা গড়ে তুলেছেন ছোট-বড় গবাদি পশুর খামার। প্রতিটি খামারির খামারে রয়েছে গাভি। অনেক কৃষকের সংসার চলে গাভির দুধ বিক্রি করে।
সেলিনা হায়াৎ আইভীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার জামিন স্থগিত
পান্থকুঞ্জ পার্ক-হাতিরঝিল ধ্বংস করে নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবি
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় দুধ বেচাকেনা। চলে সকাল ১০টা পর্যন্ত। এই এক ঘণ্টার দুধের বেচাকেনার কর্মযজ্ঞ চলে উপজেলার গোপালপুর বাজারে। ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিমপাড়ের রাজৈর, বরাইদ, ছনকা, কাকরাইদ, নাটুয়াবাড়ি, গালা, কইলা, ঘইলা, নিরালী, ধূলোৎ, দেশগাও, বৈতরা, আকাশী, নিকাশী, ধুনটসহ আশাপাশের গ্রামের খামারিরা দুধ বিক্রির জন্য খেয়া নৌকায় নদী পার হয়ে আসেন গোপালপুর বাজারে। কেউ খেয়া নৌকায় নদী পার হচ্ছেন, অন্যদিকে নদীর পানি কমে যাওয়ায় অনেকেই দুধের কলস মাথায় নিয়ে পায়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছেন। নদী পার হওয়ার পরে বেশ কিছু রাস্তার তাদের দুধ ভর্তি সিলভারের কলস মাথায় নিয়ে হাঁটতে হয়। সারিবদ্ধভাবে এসব খামারিরা দুধের কলস মাথায় নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গোপালপুর বাজারে যাওয়ার দৃশ্যটি খুবই চমৎকার দেখায়। সেখানে ছোট-বড় সব বয়সী খামারির মধ্যে নারী খামারিরাও দুধ বিক্রি করতে আসেন এই বাজারে। বাজারে পাইকাররা সেই দুধ কিনে প্লাস্টিকের ড্রামে সংরক্ষণ করে মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকেন। গোপালপুর গ্রামের রাজৈর এলাকার কয়েকজন ক্ষুদ্র খামারির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভোরবেলা থেকেই গাভির থেকে দুধ সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। গাভির বান পরিষ্কার করে তেল মাখিয়ে দিচ্ছেন। এরপর গাভির দুধ সংগ্রহের পর সিলভারের কলসিতে ভরছেন।
উপজেলার কাকরাইদ গ্রামের কৃষক সোরাব আলী বলেন, কৃষি কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। তবে কৃষি কাজের পাশাপাশি প্রায় ৩০ বছর ধরে বাড়িতে গবাদি পশু (গরু) লালন-পালন করি। ষাড় গরুর পাশাপাশি চারটি গাভি গরু রয়েছে আমার খামারে। প্রতিদিন চারটি গাভি গরু থেকে ৩০ লিটার দুধ সংগ্রহ করতে পারি। গোপালপুর বাজারে এই দুধ বিক্রি করি ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা লিটার দরে। এই দুধ বিক্রি করেই সংসারের খরচ চলে।
রাজৈর গ্রামের কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, আমি দুটি গাভি গরু পালি। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ লিটার দুধ হয়। দুই বিক্রির টাকাই আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জন। নিজের তেমন জমি-জমা নাই। এই জন্য গাভি গরু লালন-পালন করে আমার দিন বদলেছে।
পাইকারী ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই গোপালপুর বাজার থেকে সরাসরি কৃষক/খামারির কাছ থেকে দুধ কিনি। প্রতিদিন ভোরেই কর্মচারীসহ পিকআপ নিয়ে এই বাজারে আসি। দুধের গুণগত মানের ওপর দাম নির্ভর করে। কারও দুধ ৭০ টাকায় কিনি, আবার কারও দুধ ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, কোনো খামারির দুধ ৬০ টাকা প্রতি লিটারে কিনি। এই এলাকার গাভির দুধের মান ভালো। আমরা প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ মণ দুধ কেনা হয়। পরে এই দুধ ঢাকায় বিভিন্ন মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান ও হোটেলে সরবরাহ করে থাকি।
গোপালপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, প্রতিদিন এখানে আট থেকে ১০ লাখ টাকার দুধ বিক্রি হয়। পাইকাররা এই দুধ ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে আমাদের আশপাশের এলাকার কৃষকেরা গোপালপুর বাজারে তাদের গাভির দুধ বিক্রি করে আসছেন। ভালো মানের দুধের জন্য প্রসিদ্ধ একটি বাজার এটি। মাসে প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার দুধ বিক্রি হয়। এতে এই এলাকার অনেক কৃষকের দিন বদলে গিয়েছে। গাভির দুধ বিক্রি করেই অনেকের সংসারেও সচ্ছলতা এসেছে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, গোপালপুর বাজারে প্রতিদিন অনেক দুধ বিক্রি হয় এবং দুধের গুণগত মানও ভালো। আশাপাশের অঞ্চলের মধ্যে ওই বাজারটি দুধের জন্য বেশ খ্যাতিও রয়েছে। ওখানকার প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই গবাদি পশু পালন করা হয়। যার মধ্যে গাভি রয়েছে। ওই এলাকায় গবাদি পশুর উন্নয়নে উঠান বৈঠক, ঘাস উৎপাদন,খামারিদের প্রশিক্ষণসহ একাধিক কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার সবাই গাভি পালন করছেন এবং দুধ বিক্রি করে সবাই সাবলম্বী হচ্ছেন।