বিশ্ব Read more from
অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল
10 students were killed in a terrible accident in the university bus
Indian hospital offers 10% discount to BD patients for an indefinite period
দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে সামিল হয়েছিল ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে। কিন্তু গুলি লেগে পা কেটে ফেলতে হয়েছে তার। এরপর থেকেই হুইলচেয়ারই তার সঙ্গী। সেখানেই বেঁধেছেন লাল সবুজের পতাকা।
নবম শ্রেণির ছাত্র আল-আমিন হোসেন, প্রায় ২ মাস হাসপাতালের চার দেয়ালে বন্দী। গণঅভ্যুত্থানের পর ত্যাগ আর প্রাপ্তির সমীকরণ নিয়ে হিসাব না মেলালেও, মাথায় তো প্রশ্ন আসতেই পারে, দেশ কি তাদের দায়িত্ব নেবে?
আল আমিন বলেন, ‘আমার আফসোস নেই দেশের জন্য ১ পা গিয়েছে দরকার হলে আবার যাবো। আমাদের যেন মর্যাদা দেয়া হয়। আমরা যার হাত, পা হারিয়েছি তারা তো আর কাজ করে খেতে পারবো না। এমন কোথাও কর্মসংস্থান করে দিক যেন আমরা কাজ করে খেতে পারি। আমরা যেন জাতির কাছে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারি যেন কেউ না বলতে পারে আমাদের হাত নেই, পা নেই আমরা পঙ্গু। আমরা তো দেশের জন্যই লড়েছি।’
নিটোরে ভর্তি শুধু আল-আমিন নয়, বাবুল, হাসান কিংবা শাহীনের মত ৫শ'র বেশি কিশোর, যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হাত, পা বা চোখ হারিয়ে ভর্তি আছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত জীবন নিয়ে ভবিষ্যৎ কি হবে- সেই চিন্তাই কাটছে তাদের দিন।
হাসনাত বলেন, ‘আমার আটবার অপারেশন হয়েছে। ডাক্তার বলেছে তোমার চিকিৎসা ভয়ানক। তোমার ৬ ইঞ্চি হাড় নেই। নিম্নে না হলেও তিন বছর সময় লাগবে এটা ঠিক হতে।’
সাভারে সিআরপিতে ভর্তি, সদ্য এইচএসসি পাশ করা মহিবুল্লার ইচ্ছে ছিলো সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশসেবায় নিয়োজিত করবেন নিজেকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।
মহিবুল্লা বলেন, ‘আমার হাতগুলো অবশ। নাড়াতে পারি কিন্তু আঙ্গুলগুলো মুট করতে পারি না। পা নাড়াতে পারি না। ডাক্তার বলছে এই জায়গা ঠিক হবে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ।
পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা নেই, হারিয়েছেন আশার সব দিক। তাই পরিবারের শঙ্কা ভবিষ্যৎ নিয়ে।
পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র বলছে, যারা যে ধরনের কাজ করতে সক্ষম হবেন, তাদের জন্য সেই কাজের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ছাত্র আন্দোলনে আহতদের জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
সিআরপি স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি বিভাগের হেড তাহমিনা সুলতানা বলেন, ‘এইসব রোগিদের জন্য আমরা একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি যেখানে যে কাজ করতে চাই তাকে সেই কাজ করতে দেয়া হবে।’
আন্দোলনে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দরকার দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা। তাই হাসপাতালের চিকিৎসা শেষে, দ্রুত সিআরপি'র মত প্রতিষ্ঠানে আসার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
সোসাইটি অব স্পিচ এন্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপিস্টস সভাপতি ফিদা আল-শামস বলেন, ‘ড্রেসিং এবং অন্যান্য বিষয়গুলোর পর দ্রুত এখানে পুনবার্সনের জন্য আসতে হবে। তাদের যে কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন ও তাদের যে ঘাটতি তা পূরণ করার জন্য সিআরপি দায়িত্ব নিয়েছে।’
দেশের নানা জায়গা থেকে রেজিষ্ট্রেশন করছেন অনেক আহত। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুতি নিয়েছে সিআরপি।
সিআরপি নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বলেন, ‘কর্ম ও পড়াশোনা যেন তারা করতে পারে সে বিষয়ে প্লান আমাদের আছে। আমরা ধরে নিয়েছি ২২ হাজার লোক আন্দোলনে আহত হয়েছে তার মধ্যে ৫শ’ মানুষের এই পুনবার্সনের প্রয়োজন হবে।’
তবে সরকারের পক্ষ থেকে ছাত্র আন্দোলনে আহত এবং শহীদদের জন্য নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ, গঠন করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি।
স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি সদস্য ড. আতাউর রহমান রাজিব বলেন, ‘বাহির থেকে ডাক্তার হয়েছে। যাদের বাহিরে নেয়া হবে তাদের নিয়ে যাওয়া হবে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ করা হয়েছে। কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করা হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অঙ্গ হারিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। তাদের সবার পাশে থাকার আহ্বান বিজয়ী ছাত্রদের।