Dhaka, বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪

সংসার সুখের হয় দুজনের গুণে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৩১ এএম
Bangla Today News

দাম্পত্য জীবন সুখের হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো, ভালো জীবনসঙ্গী পাওয়া। আর ভালো জীবনসঙ্গী আল্লাহর কৃপা ছাড়া পাওয়া অসম্ভব। এজন্য বিয়ের ইচ্ছা করার সময় থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। কারণ পৃথিবীর সব মাখলুককে সুখ-শান্তি দানকারী হলেন আল্লাহতায়ালা। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে আমাদের দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য চোখের শীতলতা দান করো এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো। (সূরা ফুরকান : ৭৪)।

* নেককার স্ত্রী বিয়ে করা

নেককার স্ত্রী হলো জান্নাতের মতো। যে ভালো স্ত্রী পেল, সে দুনিয়াতেই জান্নাতের স্বাদ কিছুটা পেয়ে যাবে। আর যে মন্দ স্ত্রী পায় তার জন্য দুনিয়ার জীবন জাহান্নামের মতো হয়ে যায়। এজন্যই রাসূল (সা.) বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দিতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে মেয়েদের বিয়ে করা হয়, তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারি। সুতরাং তুমি দ্বীনদারিকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (বুখারি : ৫০৯০), (মুসলিম: ১৪৬৬, আহমাদ : ৯৫২৬)।

* ভালোবাসা প্রকাশ করা

একজন মেয়ে সব সময় তার স্বামী থেকে আন্তরিকতা কামনা করে। নিজের প্রশংসা শুনতে চায়। ভালোবাসা আর আন্তরিকতা পেলে স্বামীর স্বল্প আয়ের সংসার, আবদার পূরণ না হওয়ার সংসারও সে হেসে পার করে দেয়। এজন্য স্বামীর মাঝে মধ্যে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিকতা প্রকাশ করা উচিত। রাসূল (সা.) মাঝে মধ্যে স্ত্রীদের প্রতি নিজের ভালোবাসা মুখে ও আচরণে প্রকাশ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) কখনো কখনো আমাকে ভালোবেসে হুমাইরা (ছোট্ট লাল রঙের পাখি) নামে ডাকতেন এবং পাত্রের যে অংশে আমি মুখ লাগিয়ে পানি পান করতাম তিনিও সেখানে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন। (ইবনে মাজা ও মুসলিম)।

* সদাচরণ করা

সুখী পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ করা। অল্পতেই রেগে না যাওয়া। স্ত্রীর ছোটখাটো ত্রুটিগুলো ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলা। রাগ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। রাসূল (সা.) পরিবারের সঙ্গে সদাচারিকে ভালো বলে আখ্যায়িত করেছেন। হাদিসে আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মাঝে সে-ই ভালো যে তার পরিবারের নিকট ভালো। আর আমি আমার পরিবারের নিকট তোমাদের চাইতে উত্তম। (তিরমিজি : ৩৮৯৫, ইবনে মাজা : ১৯৭৭)।

* পরিবারে সঙ্গে সময় কাটান

দাম্পত্য জীবনে অসুখী হওয়ার একটি বড় কারণ হলো, পরিবারকে সময় না দেওয়া। পরিবারকে অধিক সময় দিলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালোবাসা বাড়তে থাকে। আন্তরিক হওয়া যায়। মন খুলে কথা বলা যায়। সুখ-দুঃখ সবার মধ্যে ভাগ করা যায়। হাদিসে আছে, হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-এর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের সুখের ব্যাপারে জানতে চাইলাম। তিনি আমাকে উত্তরে তিনটি উপদেশ দিলেন, ১. কথাবার্তায় আত্মসংযমী হও। ২. পরিবারের সঙ্গে তোমার অবস্থানকে দীর্ঘ করবে। ৩. নিজ কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হবে। (তিরমিজি)।

স্ত্রীর দায়িত্ব:

সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। স্ত্রীর সবচেয়ে বড় গুণ হলো, স্বামীর আনুগত্য করা ও তার প্রতি সম্মান দেখানো ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা। সারা দিন কাজ করে বাসায় ফেরা স্বামী, স্ত্রীর থেকে ভালোবাসা কামনা করে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এর প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত মুয়াজ (রা.)-থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি যদি কোনো ব্যক্তিকে অন্য কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে আমি স্ত্রীদের আদেশ দিতাম তাদের স্বামীকে সেজদা দিতে। (মুসন্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদিস নং-৮৭৮৫, সুনানে দারেমী, হাদিস নং-১৫০৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২১৪০)।

হাদিসে আরও আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, স্বামী যদি মনোবাসনা পূরণের জন্য তার স্ত্রীকে ডাকে তবে সে যদি চুলার কাছেও থাকে তবুও যেন অবশ্যই সাড়া দেয়। (তিরমিজি : ১১৬০, মিশকাত : ৩২৫৭)।

 

* কষ্ট না দেওয়া

যে কোনো মুসলমানকে কষ্ট দেওয়া মন্দ কাজ। বিশেষ করে স্বামীকে কষ্ট দেওয়া আরও মন্দ। এতে পরিবারের সুখ-শান্তি নষ্ট হয়। সামান্যতেই স্বামীকে কষ্ট দেওয়া নারী সুখী হয় না। হাদিসে আছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির নামাজ তাদের কান অতিক্রম করে না। পলায়নকারী গোলাম, যতক্ষণ সে ফিরে না আসে। এমন নারী, যে রাত যাপন করে অথচ তার স্বামী তার ওপর রাগান্বিত থাকে। ইমাম, জনগণ যাকে অপছন্দ করে।’ (তিরমিজি, হাদিস, ৩৬০)।

* পাশে দাঁড়ান

বিপদের সময় স্বামীকে সান্ত্বনা দেওয়া সুন্নত। এতে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা বহুগুণে বেড়ে যায়। রাসূলের স্ত্রীদের থেকে এ কাজ প্রমাণিত। রাসূলের ওপর প্রথম ওহি নাজিল হওয়ার পর তার হৃদয় কাঁপছিল। তিনি নিজ স্ত্রী খাদিজা বিনতে খুওয়ায়লিদের কাছে এসে বললেন, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর’, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর’। তারা তাকে চাদর দ্বারা আবৃত করলেন। এমনকি তার শঙ্কা দূর হলো। তখন তিনি খাদিজা (রা.)-এর কাছে ঘটনাবৃত্তান্ত জানিয়ে তাকে বললেন, আমি আমার নিজেকে নিয়ে শঙ্কাবোধ করছি। খাদিজা (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম, কখনোই নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। (বুখারি : ৩, মুসলিম : ১৬০)।

Leave a comment