Dhaka, বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫

ভারতীয় ক্ষতিকর তরল গুড় ও রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে ভেজাল গুড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:০৫ পিএম
Bangla Today News

 

ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী  

রাজশাহীতে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন অবৈধ ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়মনীতি পালনে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যারা সুস্বাদু খাবারে আগ্রহী তারা খেজুরের গুড় কিনতে খুব ভয় পাচ্ছেন। বাংলাদেশের ছয় ঋতুর রানী হলে শীত। খেজুরের জুস ও গুড় দিযে তৈরি শীতের পিঠার স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করছেন স্থানীয় মানুষ ও বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটকরা। কিন্তু বিপুল সংখ্যক অবৈধ মৌসুমী ব্যবসায়ী সরকারের নিয়ম অমান্য করছে।   জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) রাজশাহী অফিস এ বিষয়ে তেমন কোন ভূমিকায় নেই। 

রাজশাহী জেলায় মোট ৯টি উপজেলা রয়েছে। তবে সর্বাধকি খেজুরের গুড়ের উৎপাদিত এলাকা রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলা। সামান্য পরিমাণ হলেও রাজশাহীর পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও বাগমারায় গুড় উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু এগুলো বেশির ভাগ ভেজাল গুড়। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারণে গুড়ের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা। অবৈধ ব্যবসায়ীরা কম দামে গুড় বিক্রি করছে। তবে ওই গুড় গুলো ভেজাল। শুধুমাত্র ভারত থেকে আমদানিকৃত তরল গুড় এবং রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রনে তৈরী করছে ভেজাল গুড় । যার কারণ তারা কম দামে বিক্রি করতে পারচ্ছে। যারা প্রকৃত ব্যবসায়ীরা গুড় তৈরির তুলনা তাদের সাথে হতে পাওে না। কেন না, ওরার্গানিক গুড়ের দাম কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা বেশি হলেও ভেজাল গুড় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এটি বাজার কেনাবেচার আসল ঘটনা। মূলত, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেম্বর বাজার উত্তর বঙ্গেও ২য় বৃহত্তম বেচাকেনার হাট। যেখানে অবৈধ ব্যবসায়ীদের ভড়ি বেশি। তবে কোনো কোনো সময় সচেতন ক্রেতারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের গুড় তৈরী কেন্দ্র পরিদর্শনে আসছেন। কিন্ত প্রকৃত অর্থে ব্যবসায়ীদের জন্য এটি পর্যাপ্ত বাজার নয়।

পরিশেষে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি যত দ্রুত সম্ভব ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা আরও বলেন, পুলিশ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাথে অবৈধ ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ রয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।        

তদন্ত ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে অবৈধ ব্যবসায়ীরা ভেজাল গুড় তৈরি করে অন্যায় করছে। তারা ভারত থেকে ক্ষতিকারত তরল গুড় ও রাসায়নিকের দ্রব্য আমদানি করে। কোনো কোনো সময় তারা রাজশাহীর পদ্মা নদীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ আমদানি করছে। ভারতীয় তরল গুড় এবং রাসায়নিক মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিপুল সংখ্যক ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কাশী গাছ থেকে এই তরল তৈরি করছেন। এই কাশী এক ধরনের মিষ্টি গাছ। নদীর বালি এলাকায় এর চাষাবাদ করা হয়। এই কাশী গাছগুলো দেখতে অনেকটা আখ গাছের মতো। আসলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও এই কাশী গাছ ব্যবহার করে চিনি তৈরি করে বাংলাদেশে রপ্তানি করছে। এটা খুবই সত্যি যে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতি শীতে ক্ষতিকর তরল গুড় রপ্তানি অব্যাহত থাকে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর চারঘাট, বাঘাসহ অন্যান্য উপজেলার বৈধ্য গুড় ব্যবসায়ীরা

রাজশাহী কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) উম্মে ছালমা জানান, রাজশাহী জেলায় মোট ১১ লাখ ৮০ হাজার ১৮টি খেজুর গাছ রয়েছে। তবে চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় বেশি গাছ আছে। চারঘাট কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চারঘাট উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৯০টি এবং রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ৭৮ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫০টি গাছ রয়েছে। কৃষি দপ্তর শুধু ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু ভেজাল গুড় প্রতিরোধে সরকারি ভাবে কোনো ক্ষমতা তাদের নেই।   

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর (ডিএনসিআরপি) রাজশাহী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) মো: ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বিষয়টি তারা জানেন। সরকারি কার্যদিনের বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও ডিএনসিআরপি যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান চালায়। এই অধিদপ্তর সর্বদা জনগণের উন্নত সেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যাইহোক, প্রত্যেকেরই প্রকৃত খাবার সম্পর্কে খুব বেশি সচেতন হওয় উচিত। অবশেষে অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ডিডি। 

জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফিয়া আক্তার বলেন, ৫ আগস্টের পর সকল কার্যালয়ে কার্যক্রম একটু এলোমেলো। অবৈধ ব্যবসায়ী এবং ওরগানিক খাবার নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের একার পক্ষে অনেক কষ্টের। প্রত্যেকে নিজ স্থান থেকে অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে একটু সচেতন হওয়া উচিত। তবে প্রত্যেক ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

Leave a comment