শীত মানেই কুমড়া প্যাচের মৌসুম। এ সময় বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন বড়ি নির্মাতারা। কুমড়োর বীজ শীতের সবজি বা মাছ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। শীতের এই মেজাজে তারা বেশি দামে বড়ি বিক্রির আশা করছেন।
কুমড়া নাটোর অঞ্চলের অন্যতম উপাদেয় খাবার। স্থানীয় প্রজাতির খলবিল মাছ দিয়ে কুমড়ার তরকারি রান্না করা এখানকার ঐতিহ্য। তবে শীতকালে কুমড়া খাওয়ার প্রচলন বেশি। আর তাই শীতকালে বাজারে চাহিদা বেড়ে যায়।
মাদক ছোবল থেকে রেহাই চান খুলশী থানার এলাকাবাসী।
রাবিপ্রবি'তে ম্যানেজমেন্ট দিবস উদযাপন
৪৪তম বিসিএসে ৩ হাজার ৯৩০ জনের মৌখিক পরীক্ষা বাতিল
শীতকে সামনে রেখে নাটোরের চলনবিল ও হালতিবিল পাড়ে শুরু হয়েছে কুমরাবাদির ঘরে ঘরে রান্না।
চলনবিল ও হালতিবিল অধ্যুষিত নাটোর উপজেলার সিংড়া ও নলডাঙ্গা। সিংড়ার কালাম ও নলডাঙ্গার ব্রহ্মপুর ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার দীর্ঘদিন ধরে কুমড়াবাড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত। তবে গৃহিণীরা নিজেদের খাওয়ার জন্য কুমড়ো তৈরি করলেও শীতে যেসব পরিবারে খাবারের অভাব হয় তারা বাজারে কুমড়া বিক্রি করে।
ধীরে ধীরে এটি পরিবারের জন্য অতিরিক্ত আয়ের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফলে দুই উপজেলার শতাধিক পরিবারের তৈরি কুমড়াবাড়ি নাটোর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে।
কুমড়াদি মূলত চাল কুমড়া বা জালিকুমড়ার সঙ্গে ডালবাটা মিশিয়ে তৈরি করা হয়। কেউ কেউ স্বাদ বাড়াতে কালিজিরা বা সামান্য মসলা যোগ করে কুম্বরাদি তৈরি করেন। ডাল-কুমড়ার মিশ্রণটি হাতে গোলাকার বল বা বড়ি বানিয়ে বাঁশের থালায়, কুলা-চলুন বা বড় প্লেটে রাখা হয়। তারপর রোদে শুকিয়ে নিন। রোদে শুকানোর পর বড়ি তৈরি করতে 8-10 দিন সময় লাগে। সবজি ও মাছ রান্নার অনুষঙ্গ হিসেবে এই কুমড়ার ব্যবহার বাঙালি বাড়িতে জনপ্রিয়। এতে তরকারির স্বাদও অনেক গুণ বেড়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হালতিবিলপাড়ের ব্রহ্মপুর ইউনিয়নের ঝুপদুয়ার গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চলছে কুমড়া তৈরির উৎসব। শুধু বাড়ির মহিলা সদস্যরা নয়, পুরুষরাও অন্য কাজ না করে কুমারবাড়ি তৈরিতে সময় কাটাচ্ছেন।
সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামে ৪০টি বাড়ি রয়েছে। এদের মধ্যে ৩৮টি পরিবার সনাতন ধর্মের। এসব পরিবার দীর্ঘদিন ধরে কুমারবাড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত। তারা যে কুমড়ার স্বাদ তৈরি করে তা অতুলনীয়।
গ্রামের প্রতিটি ঘরে নারীদের ব্যস্ততা লক্ষ্য করার মতো। তারা সূর্যোদয়ের আগে রাতে পানিতে ভিজিয়ে মাশকলাইয়ের ডালপালা মারতে শুরু করে। পাকা কুমড়ার ভুসি আবার সেই ডালের সাথে ভালো করে মেশানো হয়। সবশেষে এই ডাল-কুমড়ার মিশ্রণটি ছোট বড়ির আকারে বাঁশ বা খলসুনের ওপর বসানো হয়। রোদে শুকাতে দিন।
ঝুপদুয়ার গ্রামের কুমড়াবাড়ি ব্যবসায়ী গোপার চন্দ্র প্রামাণিক জানান, এক সময় বিলে মাছ ধরে তাদের সংসার চলত। তবে শীতে পানি শুকিয়ে গেলে দুই মুঠো খাবারও পাওয়া যেত না। এমতাবস্থায় বাড়ির মহিলারা কুমড়া তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। তাদের তৈরি কুমড়ো ধীরে ধীরে বাজার ও দোকানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড়ির চাহিদা আসে। সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করতে পরিবারের পুরুষরাও বড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত। এখন গ্রামের ৩৮টি হিন্দু পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস কুমড়াবাড়ি। ব্যাপক চাহিদা থাকায় এগুলো ভালো বিক্রি হয়। বাড়তি আয়ে ভোগান্তিতে পড়তে শুরু করেছে সবার পরিবার।
একই গ্রামের পুরনো কুমড়ার ব্যবসায়ী নীরেন চন্দ্র জানান, শীতকালে কুমড়ার চাহিদা বেশি থাকলেও শহরের মানুষ সারা বছরই কুমড়া খেতে অভ্যস্ত। তাই মুদিরা সারা বছর তাদের কাছ থেকে কুমড়া অর্ডার করে। যখন কুমড়া পাওয়া যায় না, তখন তারা কুমড়ার পরিবর্তে কাঁচা পেঁপে ব্যবহার করে।
গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা দরে। ব্রহ্মপুর গ্রামের সাবিত্রী দেবী জানান, কুমড়াবাড়ি দিয়ে নানা ধরনের রান্না করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি শুধুমাত্র বড়ির স্যুপ তৈরি করতে পারেন, এবং বড়ি এবং শাকসবজি দিয়ে পুরপুরুদি বা ঘাঁট রান্না করাও সুস্বাদু। যাইহোক, লোকেরা মাটির ফ্ল্যাটের দেশীয় মাছ যেমন ট্যাংরা, শোল, টাকি, গুচি, বাইন এবং বোয়াল মাছ দিয়ে রান্না করা কুমড়াবাড়ি উপভোগ করে।
নলডাঙ্গার পরিবেশকর্মী ফজলে রাব্বি বলেন, কুমড়া মূলত একটি প্রক্রিয়াজাত সবজি। এটি সবার কাছে জনপ্রিয়। চলনবিল ও হালতিবিল এলাকায় এর উৎপাদন ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি পেশাদার শ্রেণি। এখানকার কুমড়া বিদেশেও যাচ্ছে। তাই এর অর্থনৈতিক অবদানও গুরুত্বপূর্ণ।
নাটোরের চলনবিলে অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার কালামপুন্ডারী গ্রামের প্রায় ১০টি পরিবার বড়ি তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছে। আগে শুধু শীতকালে বড়ির চাহিদা ছিল। অনলাইন কেনাকাটার এই যুগে ঋতুর অপেক্ষার প্রহর কেটে গেছে। তাই শীতের অপেক্ষায় নয়, সারা বছরই বড়ি বিক্রি। সেই সঙ্গে চলছে বড়ি তৈরির কাজ। তাই গ্রামের এই ১০টি পরিবার বড়ি তৈরির পেশায় স্থায়ী হয়েছে।
সিংড়ার কালাম এলাকার বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, কুমড়া দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং এর তরকারি সুস্বাদু তাই এর জনপ্রিয়তা