প্রতিনিধি মোঃ নুর নবী
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। মৃত্যুর মিছিল যেন কোনোভাবেই থামছে না। চলতি সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ২০ দিনে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নভেম্বরে মৃত্যুর মিছিল যেন কোনোভাবেই থামছে না। মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আক্রান্তের হারও। প্রতিদিনই রেকর্ড সংখ্যক মানুষের শরীরে নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব। চলতি বছরের নভেম্বর মাসেই মৃত্যুর রেকর্ড দেখলো চট্টগ্রামে। এর আগে কোনো মাসে এতো সংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি। মশার কামড় খেয়ে প্রতিনিয়ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক অনেকেই। এ অবস্থায় মশা মারতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নেওয়া পদক্ষেপও ব্যর্থ হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই কবে পৌঁছাতে পারে, জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা
ভালো মানুষ রাজনীতিতে না এলে সংস্কার করে লাভ হবে না: পার্থ
শ্রীপুরে পূর্ব শত্রুতার জেরে গৃহবধু কে বেধড়ক মারধর বস্ত্রহরণ প্রাণ নাশের হুমকি
এ অবস্থায় নানা শঙ্কা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন নগরীর বাসিন্দারা। অনেক শিশুও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায় বাড়ছে দুশ্চিন্তা। এ জন্য মশা মারার ওপর বাড়তি নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, এবার অল্প সময়েই আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কোনো রোগীর শক সিনড্রোম দেখা গেলে, তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।ডেঙ্গু আক্রান্তদের শারীরিক লক্ষণ এবং উপসর্গেও কিছু পরিবর্তন আসার কথাও তারা বলছেন। রোগীর রক্তচাপ যাতে কোনোভাবে না কমে, তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিচ্ছেন।
চিকিৎসকরা আরও জানান, পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসলেও, পরে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনকে ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ায় ওয়ার্ডের বাইরে চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিকেলে খোলা হয়েছে আলাদা ডেঙ্গু কর্নার।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবরে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। জানুয়ারিতে দু’জন এবং মার্চে একজনের প্রাণ গেলেও এপ্রিল, মে ও জুনে কেউ মারা যায়নি। জুলাই ও আগস্টে একজন করে এবং সেপ্টেম্বরে ১১ জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পাশাপাশি নভেম্বরে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৪৪ জন। এর মধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৯ জন।
জানা যায়, চট্টগ্রামে ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে অতি ঝুঁকিতে ৭টি, আর কম ঝুঁকিতে ৯টি। ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে আছে ৬০ শতাংশের বেশি এলাকা।
চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রোগীরা বলেন, আমার প্রথমে মাথা ব্যথা ও জ্বর আসে। বুকে কফ জমে, শরীরে ও পেটে ব্যথাও হয়। রোগীর স্বজনরা জানান, জ্বরে রোগীর পেট ফুলে যায়, কিছুই খেতে পারেন না। তাই রোগীকে চিকিৎসক স্যালাইন, ডাব খাওয়াতে বলেছেন। রোগী মশরির নিচেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনের মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে নানা মহলের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। পরে ডেঙ্গু মোকাবিলায় নানা কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। প্রথম দিন থেকেই তিনি ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট সেন্টার খুলেছে। নিয়মিত মশার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে কিনা তাও তদারকি করছে নগর জুড়ে। প্রতিদিনি নগরজুড়ে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে কয়েকটি জরিপ পরিচালনা করে নগরের কোন এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি ও কোন কোন এলাকার বাসিন্দারা বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, তা খুঁজে বের করেছি। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এ নিয়ে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রয়েছে। মশক নিধনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পাশ্ববর্তী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সরকারি হাসপাতালগুলোতে পৃথক ডেঙ্গু কর্নার করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, জমে থাকা পানি ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র। জমে থাকা পানি নিয়ে সবার সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। যেমন, প্লাস্টিকের খোসা, টায়ার, ফুলের টবেও পানি জমে থাকে। এসব বিষয়ে নজর রাখলে রোগীর সংখ্যা কমে আসবে।