সাহেদ আলী ভূঞার বয়স ৮৫। চলাফেরা করতে পারেন না। চোখে আবছা দেখেন। কানেও কম শোনেন। স্মৃতিশক্তি নাই বললেই চলে। অসুস্থতার কারণে দুই বছর ধরে শয্যাশায়ী।
এই বৃদ্ধ বাবাকে চিকিৎসা করানোর কথা বলে কিশোরগঞ্জ শহরে নিয়ে গিয়ে তার প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার সম্পত্তি লিখে নিয়ে গেছে তারই ৫ মেয়ে। এ ঘটনায় পিতার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হলো তার দুই ছেলে মোহাম্মদ মোস্তফা (৫০), ও জয়নাল আবেদীন (৩৬)।
পাঞ্জাবি বিক্রিতে বড় জালিয়াতি
Thunderstorms with gusty winds are forecast across the country
MV Abdullah will arrive in Dubai in the afternoon
ঘটনাটি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পাটধা মহিশাখালি গ্রামের। সম্পদ হারানোর বিষয়টি বুঝতে পেরে বৃদ্ধ সাহেদ আলী এখন শুধুই কাঁদছে। ভুক্তভোগী ওই বাবা দলিল বাতিল ও সম্পত্তি ফেরত পেতে আদালতে মোকদ্দমাও দায়ের করেছেন।
এ অবস্থার মধ্যেই বৃদ্ধ সাহেদ আলী ভূঞা ও তার দুই ছেলেকে ভিটাবাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে ওই পাঁচ মেয়ে। কোনো কূলকিনারা না পেয়ে বৃদ্ধ সাহেদ আলী ভুঞা শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে শহরের গৌরাঙ্গ বাজার অবস্থিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ কার্যালয়ে তার দুই ছেলে ও দ্বিতীয় স্ত্রী ককোলা আক্তারকে সাথে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতারণার মাধ্যমে সম্পাদিত দলিল বাতিল করার পাশাপাশি নিজের সম্পত্তিতে নিজের মালিকানা ফিরে পাওয়ার আকুতি জানান ভুক্তভোগী সাহেদ আলী ভূঞা। তিনি মেয়েদের প্রতারণার কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ভুক্তভোগী মো. সাহেদ আলী ভূঞা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পাটধা মহিশাখালী গ্রামের মরহুম জাফর আলী ভূঞা’র ছেলে।
অশীতিপর সাহেদ আলী ভূঞা জানান, তার দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রেখে প্রথম স্ত্রী মারা যান। এরপর ১৫ বছর আগে একই এলাকার ককোলা আক্তারকে বিয়ে করেন। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়ায় তারা স্বামীর বাড়িতে থাকে। এছাড়া দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মোস্তফা বাড়ির পাশে মুদির দোকান দিয়ে সংসার চালান এবং ছোট ছেলে জয়নাল ঢাকায় থাকেন। অন্যদিকে বয়সের ভারে ও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে কাবু সাহেদ আলী ভূঞাকে দ্বিতীয় স্ত্রী ককোলা দেখাশোনা ও সেবা-শুশ্রষা করেন। এ রকম পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় স্ত্রী ককোলা আক্তারকে জীবদ্দশায় এক কাঠা (৯ শতাংশ) জমি লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয় তার পাঁচ মেয়ে জুয়েনা আক্তার, রাব্বিনা আক্তার, রুনা আক্তার, হেপি আক্তার ও আলপিনা আক্তার।
সাহেদ আলী ভূঞা অভিযোগ করেন, তিনি সম্প্রতি হঠাৎ জ্বর ও আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়ে খুব দুর্বল হয়ে পড়েন। তখন তার মেয়েরা তাকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে গত ৩ মার্চ কিশোরগঞ্জ সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন একটি দোকানে নিয়ে বসায়। সেখানে তাকে ডাক্তারের ঔষধ নিতে হলে দস্তখত দিতে হবে এই কথা বলে কতগুলো সাদা কাগজে কয়েকটি দস্তখত নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর একটি ঔষধের বোতল এনে তারা বলে যে, ডাক্তার ঔষধ দিয়েছেন। এরপর তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
পরে সাহেদ আলী ভূঞা জানতে পারেন, ওইদিন তার দস্তখত নিয়ে তার বসতভিটা ও পুকুরসহসহ সড়কের পাশের সব সম্পত্তি (১ একর ৩৩ শতাংশ) মেয়েরা তাদের নামে হেবা দলিল করে লিখে নিয়েছে। বর্তমানে যার বাজার মূল্য সাড়ে চার কোটি টাকারও বেশি। এরপর গত ৫ মার্চ কিশোরগঞ্জ ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে হেবা ঘোষণা দলিল বাতিলের জন্য সাহেদ আলী ভূঞা বাদী হয়ে মোকদ্দমা দায়ের করেছেন।
সাহেদ আলী ভূঞা জানান, মূলত তার দুই ছেলেকে বঞ্চিত করতে তার মেয়েরা মিলে চিকিৎসার নাম করে প্রতারণার মাধ্যমে তার সম্পত্তি লিখে নিয়েছে। এখন তিনি অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। এসব বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় সাহেদ আলী ভূঞা চক্রান্তমূলকভাবে করা এই দলিল বাতিল ও তার সঙ্গে হওয়া প্রতারণার প্রতিকার চান।
এ বিষয়ে পাঁচ মেয়ের পক্ষে মেজো মেয়ে রুনা আক্তার বলেন, তার বাবা সাহেদ আলী ভূঞা স্বেচ্ছায় তাদেরকে জমি লিখে দিয়েছেন। তার মা মারা যাওয়ার পর ২০০৫ সাল থেকে প্রায় ২০ বছর ধরে তারা পাঁচ বোন মিলে বাবার ভরণপোষণ করছেন। তাদের ভাইয়েরা বাবাকে দেখাশোনা করেন না। এভাবে বাবার কাছে তাদের অনেক টাকা পাওনা হয়েছে।
যে কারণে বাবা নিজ থেকেই তাদের বোনদের জমি লিখে দিয়েছেন। এখন ভাইয়েরা বাবাকে নির্যাতন করায় উনি বাধ্য হয়ে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন বলে দাবি রুনা আক্তারের।