করোনার টিকা কেনাকে কেন্দ্র করে বেক্সিমকো ফার্মার ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সিন্ডিকেটের ২২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর দুদকের উপপরিচালক আফরোজা হক খানের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
One vote costs a lot: Prime Minister
4 people including DU Pro-VC went to Finland to buy elevator
Prothom Alo sale: Four industrial groups in bargain
সোমবার (১৭ মার্চ) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চার সদস্যের টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তার, উপসহকারী পরিচালক মো. জুয়েল রানা ও কাজী হাফিজুর রহমান। যারা এরই মধ্যে নথিপত্র সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার টিকা ক্রয়কে কেন্দ্র করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আমলাতন্ত্রের অন্যান্যদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি অসাধু সিন্ডিকেট ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সিন্ডিকেটের তালিকায় সালমান ও জাহিদ মালেক ছাড়াও তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (ডিএমআরসি) চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের নাম রয়েছে।
সূত্র জানায়, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা কেনার জন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চুক্তি করে বাংলাদেশ। যেখানে সরবরাহকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বেক্সিমকো ফার্মা। বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো এবং সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে টিকা ক্রয় চুক্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল শুরু থেকেই। টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করা হয়নি। একটি উৎস থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে দর-কষাকষির নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। নীতিমালা লঙ্ঘন করে অসাধু প্রক্রিয়ায় টিকা আমদানি করে তৃতীয় পক্ষকে লাভবান হওয়ায় সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ সরকার সরাসরি সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে টিকা আনলে প্রতি ডোজে যে টাকা বাঁচতো তা দিয়ে ৬৮ লাখ বেশি টিকা ক্রয়ের চুক্তি করা যেতো বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ভারত থেকে আমদানি করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোভিড ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজ থেকে অন্য সব খরচ মিটিয়ে ৭৭ টাকা করে লাভ করেছে। ফেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ড্যাম্বাসিনের ৭০ মিলিয়ন ডোজ পেয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৪২৫ টাকা। টিকায় মোট খরচ হয়েছে ২ হাজার ১৭৫ বিলিয়ন টাকা। অন্যদিকে চীন থেকে সিনোফার্মার ভ্যাকসিনের ৩.১৫ মিলিয়ন ডোজ আমদানিতে ২৭.৪৭৫ বিলিয়ন টাকা খরচ হয়েছে, যা প্রতিটি ৮ হাজার ৭২২.২০ টাকা বা প্রায় ১০০ ডলার। অথচ সরকারি কমিটি ১৫ মিলিয়ন ডোজ সিনোফার্মার ভ্যাকসিনের প্রতিটি ১০ ডলারে কেনার অনুমোদন দেয়। এখানে ক্রয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র বলছে, করোনার টিকাকে কেন্দ্র করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল একটি সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটে আরও ছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (ডিএমআরসি) চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। এই সিন্ডিকেটের শক্তির বলয়েই আটকে যায় বঙ্গভ্যাক্স। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আমদানি করে চত্রুটি অন্তত ২২ হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেছে। সালমান এফ রহমান তার নিজের প্রতিষ্ঠানকে তার প্রভাব খাটিয়ে লাভবান করেছেন, রাষ্ট্রের সম্পদের অপচয় হয়েছে, আর বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে পদদলিত করেছে।
সিন্ডিকেটটি করোনার প্রকোপ শেষ হয়ে গেলে গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গভ্যাক্স ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়। এরপর একটি আনঅফিসিয়াল মিটিংয়ে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের সঙ্গে গ্লোব বায়োটেককে প্রযুক্তি শেয়ার করার দাবি করা হয়। বেক্সিমকো ও গ্লোব বায়োটেক মিলে জয়েন্ট ভেঞ্চারে বঙ্গভ্যাক্স বাজারজাত করার দাবির সঙ্গে একমত না হলে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকোর চুক্তি করে ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আমদানি করে। ফলে বঙ্গভ্যাক্সের অনুমতি আর দেওয়া হয়নি। এখানে প্রতিষ্ঠানটির ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।